কবিতা

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

আজাদুর রহমানের তিনটি কবিতা

দূরত্ব একটা ধারণা আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। তুমি যেভাবেই থাকো, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে সামনে-পিছনে-ডাইনে-বায়ে তোমার যেভাবে মন চায় এমনকি পরস্পর গভীর আলিঙ্গনেও। তুমি যেখানেই থাকো ঢাকা বগুড়া চট্রগ্রাম আমেরিকা কোস্টারিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোণাতেই, আমাদের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব নেই। দূরত্ব বলে আসলে কিছুই নেই এই যে ছায়াপথের পর সুদূরে জ্বলছে যে তারা সেখানে কেউ কারও দূরে….

শায়লা সুলতানার একগুচ্ছ কবিতা

একুশ শতকের প্রেম তুমি বসন্ত হলে আমি স্নিগ্ধ হবো, তুমি মেঘ হলে আমি ময়ূর হবো, হাওয়ায় হাওয়ায় সুখ ছড়াবো পামমূকের আকাশে ভোর জাগাবো ঘুম ঘুম চোখে শুনবো অচেনা সুরের নিয়ান্ডারথাল। ভয়গুলো সব এপিটাফে রেখে হেটে যাবো মেটাভার্সের পথে তুমি-আমি অদম্য চোখের ইশারায় যদি খুনি হও আমার সলজ্জে অমাবস্যার ঘোমটা টেনে নিবে আকাশ, মহাকাশে তারাদের হৈচৈ….

তরুন ইউসুফের একগুচ্ছ কবিতা

হারানো বিজ্ঞপ্তি ধরা যাক কোন একদিন হারিয়ে গেছি শহরময় ছড়িয়ে গেছে কালো অক্ষরের শাদা শাদা লিফলেটে- একটি হারানো বিজ্ঞপ্তিঃ “নাম তরুন ইউসুফ, খর্বাকায়, গায়ের রঙ শ্যামলা, মনের রঙ কালিমাখানো ঠিকানাঃ পৃথিবী, হুট করে হারিয়ে গেছে। কোন সহৃদয় ব্যাক্তি খূঁজে পেলে উপযুক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন” লিফলেট পড়ে খোঁজখবর নিয়ে অনেকেই জানতে পারে লোকটা বেশ সুখীই ছিল….

লুব্ধক মাহবুবের একগুচ্ছ কবিতা

পথ চলা স্টেশনের ধুলোবতী পাগলের মাথার মতন এই ধুলোময় গোলকের জালে আছে যে যার তাপে। এখন আমার একমাত্র সঙ্গী নৈ:শব্দ, আমার সাথে কথা বলে, স্টেশন, লোকালয়; রেলগেট পেরিয়ে তির্যক বালিকাদের চোখে— মেঘলা মহুয়া— আগুন আগুন— কৃষ্ণচূড়ায়; কষ্ট পেলে আমাকে ভোলায়, বলে এবার তাহলে ‘একলা একলা পথ চলা।’ দক্ষিণের বিনম্র ঝাঁঝালো বাতাস জালের মতো টেনে টেনে….

শারদুল সজলের একগুচ্ছ কবিতা

রবিবার থেকে শনিবার দুখের দৈর্ঘ্য মাপতে গিয়ে ঘর ছেড়েছি, আজও ফেরা হয়নি। হাওয়ার শিকড় ছিঁড়ে ঝুলে আছে ফেরারি চাঁদ কচ্ছপের আয়ু নিয়ে রবিবারের হাটে একখাচি দুখের স্যাম্পল সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছি বনেদি, ছোটলোকি, আফ্রিকান— স্বতন্ত্র কিছু দুঃখ আমার হাতের তালুতে সূর্যকে ইঙ্গিত করে জেগে ওঠে ভোর হয় উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে এক ঝাঁক মেঘ গিজগিজ….

রোমেল রহমানের তিনটি কবিতা

পায়ে কার্তিকের  রোদ বিকেল এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে পায়ে, আমি শিকল নিয়েছি মনে। জ্বলে উঠছে সন্ধ্যামালতী, জেগে উঠছে মশার গান; আমি থমকে দিয়েছি ডানা মেলা। সমস্ত ফেরার রাস্তা বন্ধ করে, এখানে গেঁথেছি সঙ্ঘরাম, কে আমাকে ডাকছে বাইরে? আমি তো খুলবো না রুদ্ধ দুয়ার। বিষাদ ফুটেছে তোমার বনে, তার গন্ধ আটকানো যাচ্ছে না; হৃদয়ের পিপাসাকে অভিশাপ দিচ্ছি….

নিয়াজ মাহমুদের একগুচ্ছ কবিতা

আমাকে বিজয়ী করো আমাকে বিজয়ী করো নক্ষত্র জুড়ে আমি তোমার ভিতরেই আছি নেশাগ্রস্তের মতো ভয়ানক হয়ে আমার বুকে একটা ভালোবাসার লাটিম উন্মত্ত ঘূর্ণিতে বিলিয়ে দিচ্ছে কাপুরুষতা! কাপুরুষ বনাম ভালোবাসা আমাকে বিজয়ী করো এ যুদ্ধে নির্মূল করো অবিশ্বাসীর মদ্যপ দেয়াল দূর করো সভ্যতার নির্লিপ্ত কাপুরুষতা আমি তোমার নিঃশ্বাসের সুগন্ধি হবো তোমার গানের মহড়ায় নীলকণ্ঠে সুর মিলাবো….

শতাব্দী জাহিদের তিনটি কবিতা

চিরপূণ্যের বৃষ্টির আয়োজন অগ্রহায়ণের ঠান্ডা মেঘের ছন্দে নেমে আসা শীতের বৃষ্টি তোমার চোখের ফ্রেমে চলে যাচ্ছে— ফলের দোকানে ঝুলে থাকা কলার কাঁদি। আবাসিক হোটেলের মুছে যাওয়া নাম, অসামাজিক কার্যকলাপ মুক্ত পরিবেশ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জুম্মায় বিপ্লবী মুসলীমদের হুংকার নেমে এসেছে— বিরিয়ানী, গোস্তের ঘ্রাণে বাড়ি ফেরার আয়োজন। বাংলাবাজারের ভিজে থাকা আকাশটা আমরা মাথায় তুলে নিয়ে তোমার গোলাপি….

error: Content is protected !!