Author Picture

মযহারুল ইসলাম বাবলা

প্রাবন্ধিক, গবেষক। নির্বাহি সম্পাদক- নতুন দিগন্ত।

ত্রিপুরায় বাংলা ভাষা প্রচলনে রাজাদেশ

মাণিক্য-রাজাদের শাসনামল জুড়ে তাঁরা রাজভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করতেন। ত্রিপুরার বাংলা ভাষার গদ্য রচনার শুরু হয়েছিল রাজাদের আদেশপত্রের মাধ্যমে। পুরাতন চিঠিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, তাম্রপট্ট, সনদ-দানপত্র ইত্যাদিতে প্রাচীন বাংলা গদ্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। মহারাজা কল্যাণমাণিক্যের ব্রহ্মোত্তর সনদটি ১৬৫১ সালে লেখা। [ড. শিশির কুমার সিংহ, ত্রিপুরার বাংলাসাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিহাস ] সনদটি এরূপ : ব্রহ্মোত্তর সনদ তাম্রপট্ট :….

হাসির দিকপাল ঢাকার ভানু

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় খাঁটি বাঙাল এবং অনিবার্যরূপে আমাদেরই লোক। পূর্ববঙ্গের তো বটেই। খাস ঢাকারও। ঢাকার স্থানীয় কুট্টি ভাষাকে পশ্চিমবাংলা জুড়ে ছড়িয়ে ঢাকার ভানু খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তাঁর কৌতুক নক্শা সমূহে এবং বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের সংলাপগুলো নির্ভেজাল ঢাকার কুট্টি ভাষায় প্রয়োগ ও প্রচার করে নিজেকে ঢাকার ভানু রূপে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এমনিতে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষা নিয়ে পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের….

বাংলা-বাঙালি এবং বাংলাদেশ

বিশ্বের এক বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতবর্ষ। বহুভাষা, সংস্কৃতি ছড়িয়ে আছে উপমহাদেশটি জুড়ে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সকল বিষয়াদির ক্ষুদ্র সংরক্ষণ হলেও ভারতবর্ষে রয়েছে। ভারতবর্ষকে তাই মিনি ওয়ার্ল্ডও বলা হয়। মানুষের খাদ্য, পোশাক, রুচি অঞ্চলভেদে সম্পূর্ণ ভিন্ন; যেটা বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্নতার ন্যায় বিশাল ভারতবর্ষের অঞ্চলসমূহের আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক পরিবেশও ভিন্নতর। কোথাও তীব্র….

হিন্দু বর্ণবাদের অভিশাপ মোচনে জনহিতকর কর্মে রাজচন্দ্র-রাসমণি

মোগল শাসনামলে দেশীয় সামন্ত-জমিদারদের নিয়োগের একচ্ছত্র এখতিয়ার ছিল মোগল সাম্রাজ্যের অনুগত-আজ্ঞাবহ নবাব, রাজা, মহারাজাদের। জমিদারেরা ছিল কেবল মাত্র খাজনা সংগ্রাহক। ভূমির অধিকার ছিল কৃষকের। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বঙ্গদেশে শোষণ-লুণ্ঠনের অবাধ ক্ষেত্র গড়ে তোলে। কোম্পানির নানাবিধ ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশীদার হয়ে স্থানীয় কতিপয় ইংরেজ অনুগত মুৎসুদ্দি-বেনিয়া চক্র রাতারাতি অর্থ-বিত্তের পাহাড় গড়ে তোলে।….

শহীদ সাবেরের ‘আরেক দুনিয়া’ (সব পর্ব)

শহীদ সাবেরকে জানতে পড়ে নিন- শহীদ সাবেরের আরেক দুনিয়া । মযহারুল ইসলাম বাবলা   চট্টগ্রামে জেলে বসেই বন্দি জীবনের কাহিনী নিয়ে লিখেছিলেন আরেক দুনিয়া থেকে নামক রোজনামচাটি। লেখাটি গোপনে জেল থেকে পাচার হয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত নতুন সাহিত্যের চৈত্র ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ সংখ্যায় ছাপা হয়। লেখাটি নিয়ে চারদিকে সাড়া পড়েছিল। কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লেখাটি পড়ে মুগ্ধ….

শহীদ সাবেরের আরেক দুনিয়া

সময়টা পাকিস্তান আমল। এক কোরবানি ঈদের দিন। পুরানা পল্টন লেনের দাদার বাড়িতে দুপুরের পর শাহজাহান চাচার সঙ্গে ক্যারাম খেলছিলাম মহিউদ্দিন মন্টু ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু চাচার বেড়ার ঘরসংলগ্ন বেলিম্বু গাছের ছায়ায়। ক্যারাম খেলায় এতটাই মশগুল ছিলাম যে পাশে দাঁড়ানো কারও উপস্থিতি টের পাইনি। বিশ্রী দুর্গন্ধে পাশে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছিলাম। ময়লা-ছেঁড়া….

শহীদ সাবেরের ‘আরেক দুনিয়া’ (পর্ব-৫)

সব চিঠিতেই শুভেচ্ছা থাকে না। থাকে এক করুণ চিত্র। ছাত্রটির বাবার চিঠি এসেছে। তিনি লিখেছেন : ‘… পরিবার ভেঙে গেল। তোমার জন্য তোমার আম্মা পাগল হয়ে গেছে। তোমার ছোট ভাই-বোনদের যন্ত্রণাদায়ক প্রাণান্ত জিজ্ঞাসা আমারও জীবনীশক্তির মূলে আঘাত করছে। তুমি যদি ইচ্ছে কর তবে মুক্তিলাভ করতে পার অনায়াসে। সরকারের কাছে জানাও যে তুমি আর রাজনীতি করবে….

শহীদ সাবেরের ‘আরেক দুনিয়া’ (পর্ব-৪)

শীতের দিনগুলো ছোট। পত্রিকা পড়া শেষ হতে না হতেই দুপুর গড়িয়ে যায়। এখন শরীরচর্চার পালা। ডাক্তারের সহায়তায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্কিপিং রোপ পাওয়া গেছে। উপকরণ ওইটুকুই। প্রায় সবাই আজকাল শরীরচর্চা করে। বুক-ডন, বৈঠক, কয়েকটি পর্যায়ে। কারাকক্ষের একটি অন্যতম শারীরিক শত্রু হচ্ছে- হজমের গোলমাল। হজম না হওয়া থেকে গড়া নানা অনিয়ম। প্রায় সবারই আজকাল অর্শ রোগ….

শহীদ সাবেরের ‘আরেক দুনিয়া’ (পর্ব-৩)

প্রথমে বুদ্ধিজীবীটির কথাই ধরা যাক। গণিত শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি ছিল-গণিতের বইও প্রকাশ করেছেন। জন্মগ্রহণ করেছেন এক গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে। কিন্তু আশৈশব কাটিয়েছেন এমন আর এক পরিবারের সঙ্গে যার প্রতিটি লোক কোনো না কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি নিজে রাজনীতি করেন সেই অনুশীলন-যুগান্তরের দিন থেকে। ১৯৩৮ সালের শুরু থেকে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিতি লাভ করেন।….

শহীদ সাবেরের ‘আরেক দুনিয়া’ (পর্ব-২)

কয়েদি আছে প্রায় শ’তিনেক। খুনি আসামি, রেপ কেস, ডাকাতি সব ধরনের সাজাওয়ালা। পকেটমার, দাঙ্গাবাজ থেকে শুরু করে সরকারবিরোধী প্রচারপত্র বিলির আসামি সবাই আছে। কারও ছ-মাস, এক বছর, পাঁচ বছর, দশ বছর, এমনকি পঁচিশ বছরের সাজাওয়ালাও কয়েকজন আছে। সশ্রম কারাদণ্ডভোগীরা কাজ করে। দড়ি পাকানো থেকে জল তোলা, মাটি কোপানো সব ধরনের কাজ। তরিকারির বাগান আছে। জেলের….

error: Content is protected !!