Author Picture

জাতীয় নিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া কী ঠিক হবে?

একেএম শামসুদ্দিন

সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই ঢাকার দুটি জাতীয় দৈনিকে পর পর দুটি সংবাদ শিরোনাম দেখে বিস্মিত না হয়ে পারিনি। এর মধ্যে ০৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘ভারতের সঙ্গে যুক্ত হোক বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।’ ‘অখণ্ড ভারত’ গঠনে বিরোধী দল কংগ্রেসকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে যুক্ত করে অখণ্ড ভারত গড়ে তুলতে হবে।’ বিবিসি ও এনডিটিভি উদ্ধৃত করে লিখেছে—হিমন্ত বিশ্বশর্মা আরো বলেছেন, ‘১৯৪৭ সালে কংগ্রেসের ভুলের কারণে পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসের উচিত সেই ভুল সংশোধনে মনোযোগ দেওয়া।’ সম্প্রতি কংগ্রেস, সর্ব উত্তরের কাশ্মির থেকে সর্ব দক্ষিণের জেলা কন্যাকুমারী পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ লংমার্চ শুরু করেছে।

কংগ্রেস এই লংমার্চের নাম দিয়েছে ‘ভারত জোড়ো।’ পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম দেখে যেন আরও শিহরিত হয়েছি। শিরোনামটি ছিল এরকম, ‘বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে মহাসড়ক চায় ভারত’। শিরোনামের নীচে বুলেট পয়েন্টে লেখা ছিল, বাংলাদেশের হিলি ও মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জকে যুক্ত করার প্রস্তাব ভারতের। মহাসড়ক হলে যমুনায় আরও একটি সেতু বানাতে হবে। চিকেন-নেকের বিকল্প হবে এই সড়ক। পাঠক, আসামের হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্য যদি স্রেফ অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বক্তব্য বলে ধরে নিয়ে তেমন গুরুত্ব নাও দিই, হিলি ও মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জকে যুক্ত করে মহাসড়ক নির্মাণে ভারতের এ প্রস্তাবকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা গেল না। কারণ, এ মহাসড়ক শুধু ভারতকে অর্থনৈতিক সুবিধায়ই দেবে না, সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য এ মহাসড়ক কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে হিলি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের যে প্রস্তাব ভারত দিয়েছে; সে প্রস্তাব কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনার দাবি রাখে। ভারতের প্রস্তাবিত এই সড়ক ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিরপত্তার জন্য ঝাঁকিপূর্ণ হবে কিনা তা যাচাই করে নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতির ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মহাসড়ক নির্মাণের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। কৌশলগত দিক দিয়ে এই মহাসড়ক ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটি বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যকার ভারতের ‘চিকেন-নেক’ হিসেবে পরিচিত পথের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এই মহাসড়ক হবে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি ও সংক্ষিপ্ত যোগাযোগমাধ্যম।

আগরতলায় পণ্য পৌঁছাতে যেখানে ১৬০০ কিলোমিটার পথ তিন-চারদিনে পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতো; এখন মাত্র ৮০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে আগরতলায় পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে

জানা গেছে, গত তিন-চার বছর আগে অর্থাৎ গত জাতীয় নির্বাচনের পরপর বাংলাদেশের এক উর্ধ্বতন কুটনীতিককে ভারতীয় পক্ষ থেকে এই মহাসড়ক নির্মাণের ধারণা দেয়া হয়। এবার আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় সুনির্দিষ্টভাবে মহাসড়কটি নির্মাণের বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদন প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যগুলোর সঙ্গে সড়ক, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়েছে। ভারত উপকৃত হবে এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশি লাভবান হবে, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ যৎসামান্যই লাভের মুখ দেখছে। একটি মাত্র উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

এক সময় কলকাতা থেকে আগরতলায় পণ্য পৌঁছাতে যেখানে ১৬০০ কিলোমিটার পথ তিন-চারদিনে পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতো; এখন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নতুন নির্মিত বারৈয়ারহাট-হোঁয়াকো-রামগড় মাত্র ৮০ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিয়ে অতি অল্প সময় ও খরচে আগরতলায় পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে। এই সড়ক নির্মাণকালে সামরিক দৃষ্টিকোন থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ সরকার সম্ভবত সেদিকে দৃষ্টি দেননি। অথবা বাংলাদেশের যে সমস্ত সংস্থা জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাঁরা সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ সড়ক নির্মাণের আগে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের চিন্তা করা উচিত ছিল ফেনীর চর চান্দুনিয়া-বারৈরহাট-ভালুকিয়া-রামগড় এলাকা বরাবর বাংলাদেশেরও একটি ‘চিকেন নেক’ আছে। এই চিকেন নেক বরাবর একবার যদি দখল করে নেওয়া যায় তাহলে সমস্ত চট্রগ্রাম- পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই যখন একের পর এক সড়ক, রেল ও নৌপথে ভারতের পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দিয়ে আসছিল, তখনই ধারণা করা গিয়েছিল যে, ভারত না জানি হিলি থেকে মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের আবদার করে বসে।

এখন দেখছি, ভারত সত্যিই এ সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে বসেছে। হিলি ও মহেন্দ্রগঞ্জের মধ্যে ‘আন্তসংযোগ’ স্থাপিত হলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য কিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হতেই পারে। এই মহাসড়ক নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যকার ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত পথের বিকল্প পথ হিসেবে ভারত এই মহাসড়ক ব্যবহার করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ মহাসড়ক ভারত কখন বিকল্পপথ হিসেবে ব্যবহার করবে? ভবিষ্যতে যদি এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যাতে, ভারত তাদের ‘চিকেন নেক’ দিয়ে মূল ভূখন্ড থেকে পণ্যবাহী যানবাহন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে প্রেরণ করতে পারবে না; ঠিক তখনই তো বিকল্পপথ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। অথবা এমনও তো হতে পারে- ভারত, চীন অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ল যে ‘চিকেন নেক’ দিয়ে পণ্য ও সামরিক সরঞ্জাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রেরণ করা নিরাপদ মনে করছে না, তখন কি তারা ‘হিলি-মহেন্দ্রগঞ্জ মহাসড়ককে বিকল্পপথ হিসেবে ব্যবহার করবে? যদি তাই হয়, তাহলে কি আমরা তখন, ‘ভারতের সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনে অনুমোদন দিতে বাধিত থাকিব?’

এই চিকেন নেক বরাবর একবার যদি দখল করে নেওয়া যায় তাহলে সমস্ত চট্রগ্রাম- পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে

বাংলাদেশের ম্যাপ একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বা কম দূরত্ব হলো হিলি থেকে মহেন্দ্রগঞ্জের দূরত্ব। যদি মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়, তাহলে সামরিক রণকৌশলের দৃষ্টিকোন থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ভবিষ্যতে এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, উভয় দিক দিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে হিলি-মহেন্দ্রগঞ্জ মহাসড়ক বরাবর যদি কাট-আপ বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, তাহলে সম্পূর্ণ রংপুর বিভাগ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। সামরিক পেশার অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, এ মহাসড়ক নির্মিত হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে পড়বে। যদিও এ মহাসড়ক নির্মাণে, ভারতের দেওয়া প্রস্তাবে কী কী আছে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়; তবুও হিলি থেকে মহেন্দ্রগঞ্জের মধ্যকার যেকোনো যোগাযোগসুবিধা গড়ে তোলার আগে উপরে উথ্থাপিত প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর আমাদের জানতে হবে।

এ সড়ক নির্মাণের পিছনে শুধু বাণিজ্যিক লাভের বিষয় বিবেচনা করলেই হবে না। সামরিক কৌশলগত দিক থেকে কতটুকু গুরুত্ব বহন করে সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে তা চিরকাল বজায় থাকুক এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলেরই কাম্য। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেলে ভবিষ্যতে কি হয় কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে ভারত ও নেপালের একটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ভারত অনেক আগে থেকেই চীনকে মোকাবেলা করতে তার পার্শ্ববর্তী ছোট দেশগুলোর ভূমি ব্যবহার করে বৃহত্তর রণকৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে যে এগিয়ে যাচ্ছে তা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। ভারত ও নেপালের সীমান্ত এলাকায় সড়ক নির্মাণ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নেপাল এ সড়ক নির্মাণের সময় প্রতিবাদ জানালেও ভারত তা শুনেনি। হিমালয়ের এই অংশের একটা গিরিপথের নাম লিপুলেখ এবং এর দক্ষিণে অবস্থিত কালাপানি এলাকা। চীনকে মোকাবেলার জন্য এই এলাকাটির সামরিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে, নেপাল এই এলাকায় ভারতকে অস্থায়ীভাবে সৈন্য সমাবেশের অনুমোদন দিয়েছিল। নেপালের দাবি অনুসারে, সেই থেকে ভারতীয়রা কালাপানি থেকে আর সরে যায়নি। ভারত এখন লিপুলেখ থেকে কালাপানি পর্যন্ত, ৮০ কিলোমিটার একটি রাস্তা নির্মাণ করেছে, যাতে সহজে তিব্বতের কৈলাস মানস সরোবর পর্যন্ত যেতে পারে। ইতোপূর্বে সিকিম হয়ে কৈলাস মানস সরোবরে পৌঁছুতে পাঁচদিন লাগতো। ভারত শুধু রাস্তা নির্মাণই করেনি, ২০১৯ সালের নভেম্বরে কালাপানি এলাকাকে তাদের নতুন ম্যাপে অন্তর্ভুক্তও করে নিয়েছে।

উভয় দিক দিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে হিলি-মহেন্দ্রগঞ্জ মহাসড়ক বরাবর যদি কাট-আপ বা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, তাহলে সম্পূর্ণ রংপুর বিভাগ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে

এরপরই নেপালে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। নেপাল দাবি করেছে, ‘১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাগাউলি চুক্তি অনুযায়ী ওই অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নেপালের। নেপালের ডিপার্টমেন্ট অব সার্ভে -এর এক প্রতিবেদনও বলা হয়েছে, ১৮৫০ ও ১৮৫৬ সালে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রস্তুত করা মানচিত্র অনুযায়ী দেখা যায়, কালাপানি নেপালের অংশ। কিন্তু ভারত এখন আর এসব মানচিত্র গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। বরং এলাকাটি যে কয়েক যুগ ধরে তাদের নিজেদের দখলে রেখেছে সেটা নেপালকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ভারতের বিরোধিতা সত্ত্বেও নেপাল ২০২০ সালে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরা
এলাকা নিজেদের ভূমি দাবি করে তাদের নতুন ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করে। নেপালের এই পদক্ষেপ ভারত সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। আগেই উল্লেখ করেছি ভারত, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে অল্প খরচ ও সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছানোর সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ ব্যবহার শুরু করেছে। তবে আশঙ্কা হয়, বর্তমানে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা পণ্য পরিবহনে সীমাবদ্ধ থাকলেও, ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্বাঞ্চল সীমান্তে চীনের সঙ্গে যদি কোনো বৈরী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় অথবা ওই অঞ্চলে তাদের অভ্যন্তরিন গোলযোগ মোকাবেলার জন্য যদি এই সড়ক দিয়ে জরুরী সামরিক সরঞ্জামাদি পরিবহনের প্রয়োজন হয়; তখন, বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ভারত যে বাংলাদেশকে অনুরোধ করবে না সে গ্যারান্টী কে দেবে?

১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে বন্ধুত্বের খাতিরে ‘কালাপানি’ অঞ্চল ভারতকে ব্যবহার করতে দিয়ে নেপাল আজও দূর্ভোগ সহ্য করে চলেছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, এ সমস্ত সড়ক ব্যবহার করে বাণিজ্যিক পণ্য ছাড়াও বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এমন সরঞ্জামাদি পরিবহনের অনুরোধ করে বসে তখন বাংলাদেশ কী পারবে সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে? ভারতের সঙ্গে এধরণের আবদার রক্ষার পূর্ব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে। ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা বাঁধ পরীক্ষামূলক চালু করার নামে ভারত যে আবদার করেছিল সে আবদার রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আজও দূর্ভোগ সহ্য করে যাচ্ছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে চিন্তা করতে হবে, বন্ধুত্বের খাতিরে তাদের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিসর্জন দেওয়া কি ঠিক হবে?

আরো পড়তে পারেন

একাত্তরের গণহত্যা প্রতিহত করা কি সম্ভব ছিল?

২৫ মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি নরঘাতকেরা যে নৃশংস হত্যাকান্ড চালিয়েছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসে চিরকাল কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই এক রাতেই শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই ৭ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার করা হয় প্রায় তিন হাজার। এর আগে ওই দিন সন্ধ্যায়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা একতরফাভাবে….

ভাষা আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা

আগের পর্বে পড়ুন— চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল) ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ও একটি সার্থক গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলনের মূল চেতনা বাঙালী জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেম থেকে জাত সেই অনুভূতি, যার একটি রাজনৈতিক প্রকাশ রয়েছে। আর, বাঙালি জাতিসত্তাবোধের প্রথম রাজনৈতিক প্রকাশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে দুই হাজার মাইল দূরত্বের….

চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩-১৯৫৬ সাল)

আগের পর্বে পড়ুন— বায়ান্নর ঘটনা প্রবাহ একুশের আবেগ সংহত থাকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। আওয়ামি লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানও ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ১৮ ফেব্রুয়ারি সংগ্রাম কমিটির সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র….

error: Content is protected !!