Author Picture

মোবাশ্বির হাসান শিপনের একগুচ্ছ কবিতা

মোবাশ্বির হাসান শিপন

উচ্ছ্বাসের নদী
.
উচ্ছ্বাসের নদীতে যেতে যেতে-
আমাদের স্বপ্নদ্যানে হেঁটে হেঁটে সন্ধ্যা নামে;
সহিষ্ণু মমতা ব্যবচ্ছেদ করে-
বিবর্ণ ডায়রী লোনাজলে ভেসে যায়।
ল্যাম্প পোস্টের জন্ডিস আলোয়-
ধ্যানের রাজ্যের কিনারা বেয়ে
মায়ার শরীরে সিরোসিস বেঁধে
নিথর লাশে সমাপ্তি টানে।

 

গভীর পরিখা
.
এতো গভীর পরিখা-
তবু নিপুন গহ্বরের আর্তনাদের আগুন
বুকের মাঝখানে,মগজের করোটিতে
ক্যামনে সাঁতরে আসে!
এই নিঃশ্বাসে,এই রক্ত কণিকায়
অবাধ্য ঢেউয়ের প্লাবনে আর কী হবে-
লোনা জলে কি আর সবুজ ফলে!
ভ্রুন জাগার আগেই পচে যায়,গলে যায়।
জীবন কখনও ঝড়ের বাতাসে ভাসে
স্পর্শের বাইরে,ছামিয়ানার বাইরে।

 

একাদের অঙ্কুরে
.
মধ্য আকাশে যখন সূর্য খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে-
আমার ছায়াও আমাকে ছেড়ে চলে যায়,
মৃত্তিকার আলিঙ্গন থেকে স্পর্শের বাইরে।
পরাণ ব্যাকুল করা এই তুমিও চলে যাবে;
এ আর নতুন কি!
যাবেই যখন, অপেক্ষার দিনগোনা মিছিল থামিয়ে-
মগজের দরজায় খিরকি লাগিয়ে দাও।
আমিও শূন্যে ফিরে যাবো,
একাদের অঙ্কুরে।

 

এই মৃত্তিকায়
.
এই মৃত্তিকায় মিশে থাকা
নিরাকার উর্বর শ্বাসক্রিয়া
পাথর দিয়ে থেতো করে দিল
মুমূর্ষু কয়েকটি কথা …!
বিশ্বাসে লুকিয়ে থাকা ঘাম
যার ওজন জানা নেই,
পাতায় জমা একফোঁটা বৃষ্টির জল
চোখে উপমা হয়ে হাঁটছে…।
মনের গুল্ম লতাগুলো একটু
অবলম্বন চায়; কিছু স্রোত ধরে রাখা-
মেঘের ওপর আঁকা নক্সাখানি
তোমার পরশে মিলিয়ে গেল শূন্যে।

 

একাই থাকতে দাও
.
একাই থাকতে দাও,
চারপাশে চৌহদ্দি এঁকে দাও
অমোছনীয় কালির গভীর আঁচড়ে।
স্রোতের ভেলায় তোমাদের বোবা মিছিলে-
একটু নড়েচড়ে উঠলেই অথৈ জলে ফেলে দিবে,
আরো কত কি!
নষ্ট জলে ডুবতে চাইনা; একাই ভেসে থাকতে দাও-
জলে-স্থলে এই শূন্যদ্যানে।
একাই থাকতে দাও,
একাদের সম্পর্কের রৈখিক-কৌনিক দূরত্বের
বহুমাত্রিক জ্যামিতিক হিসেব নেই,
মন্দ-ভালো, আশা পূর্ণের নদী নেই।
গাছের ছায়ায়,মাটির মায়ায়
একাই থাকতে দাও।

 

একদিন আলো আসবে
.
আসমানি চাঁদের আলোয়
চোখ তার ছল ছল
নিমিষেই যেন আঁধার আকাশ ফুটো হয়ে
জলে ভাসিয়ে দিবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।
হৃদয়ে বাংলাদেশ; লাল-সবুজ বিবর্ণ
বুকের পাথরচাপা অলিগলিতে
এঁকে দেয় অমাবস্যার অন্ধকার।
কখনো কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলের মতো
মস্তিষ্কের নিউরন ঝাঁকি দেয় একাত্তর।
জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন, কাঁটাতারে ফালানি
খুঁজে পায় না আগামী।
সাহেব আলীর হারানো হাত, অলি মিয়ার ভাইয়ের খুলি
আঞ্জেরার স্বামী গনি মিয়ার কলাপাতায় মোড়ানো লাশ
পঞ্চাশের ঘাড়ে ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
তবুও আশার পলিতে নির্বাক চেয়ে থাকা।
দো-আঁশের উর্বর পরশে
কোনো একদিন আলো আসবে!

আরো পড়তে পারেন

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

আজাদুর রহমানের তিনটি কবিতা

দূরত্ব একটা ধারণা আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। তুমি যেভাবেই থাকো, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে সামনে-পিছনে-ডাইনে-বায়ে তোমার যেভাবে মন চায় এমনকি পরস্পর গভীর আলিঙ্গনেও। তুমি যেখানেই থাকো ঢাকা বগুড়া চট্রগ্রাম আমেরিকা কোস্টারিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোণাতেই, আমাদের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব নেই। দূরত্ব বলে আসলে কিছুই নেই এই যে ছায়াপথের পর সুদূরে জ্বলছে যে তারা সেখানে কেউ কারও দূরে….

error: Content is protected !!