Author Picture

মুনিরা মেহেক এর একগুচ্ছ কবিতা

মুনিরা মেহেক

১.
আজ এই অন্ধ রাতে জেগে আছে কিছু রাতজাগা ফুল
সুবাসে তলিয়ে যাচ্ছে আমার অবিন্যস্ত কফিন
রুমালের ভাঁজে মাথা লুকিয়ে আছে এক শহুরে সন্ন্যাস
আমার মাথার উপরে স্থির কিছু কুয়াশা
ফেটে পড়ছে লোভাতুর ফাঁসির সেই মঞ্চ

তোমার সেই শব্দের গলা আজ কোথায়
কলমের ভেতর বয়ে যাচ্ছে কালনি নামের এক নদী

এখনো অবশিষ্ট আছে অন্ধকার
পলাতকের শাদা রক্তে স্নান করছে প্রিয়তম অসুখ
তোমার সে রকম চোখ নাই
পাখিদের উড়ার মতো এমন দৃশ্য আঁকছে কোন এক কবি
কফিনের দরজায় আটকে আছে একগোছা চুল

বিস্মৃত গ্রামের পাঠশালা
অক্ষর হয়ে ডাকছে আমায় ঠাকুর মার পিতলা চোখ


২.
আমি সংগোপনে স্বর্গ ঘুরে আসি
তিন বছর আগের কোন এক শিশিরের ডাকে
পালিয়ে নরকের দরজায় দাঁড়াই
জীবনের একটা মাত্র ভোর শুকিয়ে বালু হয়ে গেল

স্বর্গের দিকে যাই
নরকের দিকে যাই
তিনি কোথাও থাকেন না
দায়ভার নিয়ে কোন মাথা ব্যথা তার নাই

আমি সংগোপনে পৃথিবীতে থাকি না
আমার পা আছে তবু হাটিনা
মর্মর পাতার কাছে বসি
এমন দৃশ্য নিয়ে আমার চোখ তলিয়ে যায়


৩.
একদিন আমি বিদ্যুতের জানালায় বসি
পাথরের খাঁচাগুলো থেকে পালিয়ে যায় রঙিন কিছু পাখি
শিশির ঝরার মতন কতিপয় পালক ঝরে
আমার চোখে যেন নিরাময় নেমে আসে

পৃথিবীর বিদ্যালয়ের বারান্দায় আমাদের পা
নৃত্য করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছে জলপাইয়ের বিচি
সন্ধ্যায় আব্বার প্লাষ্টিকের জুতা উড়তে থাকে
এমন কল্পনা আমি কিছু দিন স্বপ্নে দেখি

বনের ভেতর আমি যেন ঝরছি
জ্বরের ঘোরে আমার আলখাল্লা খসে পড়ছে
কপালে তোমার হাত নাই
বাড়ির উঠোনে তবু বিদ্যুৎ পালক শিশির ঝরছে


৪.
কাল সারা রাতে ঘুরে এলাম পৃথিবীর এক বাগান
অনেক কমলার ভেতর আমি এক পরিযায়ী পাখি
সংসারহীন
বস্রহীন
কপালহীন
এক রতি শিক্ষক আমার শ্মশানে ঘুমায়

কাটা হাত খানা পৃথিবীর কোথাও পড়ে আছে
পাতি হাঁসের দল ডালিম কুড়াতে যায়
গুলি ভর্তি রাতকানা বন্দুক
ক্ষুধার্ত মশাটির বুকে চাষাবাদে মগ্ন বিষন্ন কৃষক

রাত ফুরিয়ে আসে
নৃত্য থামে না
খুনের অহংকার পদপাশে থামে

আমার ঘরের দরজা নাই প্রিয়
তবু বিলাস সন্ন্যাস নিয়ে আসে


৫.
পৃথিবীর আয়নায় হেটে যাচ্ছে এক মগ্ন সরিসৃপ
আমার বহুগামী জুতা
সহজ কাকলি নিয়ে থৈ থৈ জল
চাঁদের উপর পিছলে পড়ছে ভাঙ্গা মুখগুলো

বসন্ত উৎসব শেষ
নব নব কলির নিচে শুয়ে আছে বৃন্দাবনি পাতা

সৎকার শেষ প্রিয়
আমার মৃত্যু মুখর দিনে হিজল যেন ঝরে
আর সেই অন্ধ হরিণীর প্রতি
নরকের সকল দরজা খুলে কিছু চুমু ছুড়ে দিও

আরো পড়তে পারেন

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

আজাদুর রহমানের তিনটি কবিতা

দূরত্ব একটা ধারণা আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। তুমি যেভাবেই থাকো, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে সামনে-পিছনে-ডাইনে-বায়ে তোমার যেভাবে মন চায় এমনকি পরস্পর গভীর আলিঙ্গনেও। তুমি যেখানেই থাকো ঢাকা বগুড়া চট্রগ্রাম আমেরিকা কোস্টারিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোণাতেই, আমাদের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব নেই। দূরত্ব বলে আসলে কিছুই নেই এই যে ছায়াপথের পর সুদূরে জ্বলছে যে তারা সেখানে কেউ কারও দূরে….

error: Content is protected !!