Author Picture

হবিগঞ্জের ‘সাতছড়ি ইকোপার্ক’

মাহবুবা হোসেইন

কে বলে জীবন সুন্দর নয়? দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটে পা ফেলে ফেলে যারা ঘুরে বেড়ায় তাদের জন্য কথাটা সত্য নয়। প্রকৃতি সেখানে নিপুন হাতে সাজিয়েছে নিজের সংসার। শুধু চোখ থাকা চাই আর চাই নূর কামরুন নাহার আর আল্পনা ভাবীর মত বন্ধুত্বের রসায়ন। বিষয়টি হবিগঞ্জ যাবার আগেও বার কয়েক বুঝেছিলাম মেঘনায়, মুন্সিগঞ্জে, সেন্টমর্টিনে এবং সর্বশেষ হবিগঞ্জে। এ সব কথা পরে হবে, আগে হবিগঞ্জের কথাটা সেরে নি।

আল্পনা আপা যখন বললেন আমার ভাই হবিগঞ্জের ডিসি (ফুড), আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেল, চোখের তারা চকচক করতে লাগল লোভে, আর নূর কামরুন নাহার আপাকে সারপ্রাইজ দেবার আনন্দে। কিন্তু ভাবিনি ঘটনাটা এত সহজে ঘটবে। এক করোনা, দুই আমি না হয় ‘নীড় ছাড়া পাখি’ কিন্তু আল্পনা আপা তো ‘সংসারি’ হাজারটা সামলাতে হয় কিন্তু আশ্চর্য বলার সাথে সাথে কেমন সামলে-সুমলে ফেললেন সব, রচনা করে দিলেন এক অপূর্ব আনন্দ সফর।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। নিজেকে লাল সবুজে সাজিয়ে নেয়া মন্দ কি? কথাটা যদিও কামরুন আপার আমি লুফে নিলাম, পড়ে নিলাম অ-মিশেল গঙা যমুনার মত লাল সবুজের জামদানী, গলায় রক্তিম কন্ঠহার। আশা ছিল কামরুন আপাও সাজবেন একই সাজে কিন্তু তিনি সাবধানী, লাল সবুজকে দিতে চাননি রাস্তার ধকল, বেচারা লাল সবুজ এমনিতেই সয়েছে ‘নয় মাসের’ অসহনীয় অত্যাচার, আর কেন? তবে যত্নে গুছিয়ে নিয়েছেন ব্যাগে, পরদিন সযত্নে পড়বেন বলে। আল্পনা আপার শাড়ি ভীতি প্রচন্ড, তাই তাকে নিস্তার দিয়েছি লাল সবুজ সেলোয়ার কামিজেই।

কে বলে জীবন সুন্দর নয়? দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটে পা ফেলে ফেলে যারা ঘুরে বেড়ায় তাদের জন্য কথাটা সত্য নয়। প্রকৃতি সেখানে নিপুন হাতে সাজিয়েছে নিজের সংসার

হাতিরঝিল থেকে রওনা দিলাম যখন মনের ফূর্তি কি আর বাঁধ মানে? প্রকৃতি কি করে জানল আমার মনের কথা? কুয়াশার চাদর খানিক সরিয়ে হেসে বললে ফিরে এসে যেন ভ্রমণ-বৃত্তান্ত শুনতে পাই, ঝিলের পানিও সায় দিল চিকচিক হাসিতে ‘হ্যাঁ শোনান চাই’। হাত নেড়ে সায় দিলাম সানন্দে।

ঢাকা টপকে যেতেই কত কি যে। প্রকৃতি যে কত কথা বলে, যদিও নির্বাক তবুও তার কথা আছে কিন্তু অনেকটা নির্বাক ছবির মত।
কোথাও কাশফুলের পাড় দেয়া এক টুকরো পুকুর, ঝোপের আড়াল শেষেই উঁকি দেয় টুকরো মেঘ আর নীল আকাশের ছবির বিশাল ঝিল, দিগন্ত সীমায় গ্রামের সীমারেখা, তারপরই শাইশাই করে ছুটে চলে হলুদ আর সবুজের লুকোচুরি… শর্ষে আর কচি ধানের আড়াআড়ি-মাসটা যে পৌষ আর দিনটা কাঁচের আয়নার মত। চোখে মুগ্ধতা কিন্তু আমাদের মুখে খই ফোটা কি আর বন্ধ নাকি? কামরুন আপা আছেন না? এত জানা যার তার মুখ বন্ধ থাকে কি করে। আল্পনা আপার পিছে লেগে হাসির হররা ছুটিয়ে দিতে আর কতক্ষণ, হাহাহিহি অজস্র ধারা, আমি কেবল ধুনু দিতেই জানি।
সময়গুলো কি-রে? তাদের পাখা আছে নাকি? শাইশাই করে শেষ হয়ে গেল কখন? সাইন বোর্ডগুলো সমানে বলে চলেছে হবিগঞ্জ হবিগঞ্জ। তাই নাকি? এত তাড়াতাড়ি? কেন? কেন ম্যান?

হবিগঞ্জে ব্যবস্থা তো একেবারে পাঁকা। ‘আমাদ’ হোটেলে। বিশাল রুমে শ্বেত কপোতের মত তিনটা বিছানার হাতছানি, হাহাহিহির কি দারুন আয়োজন। ধন্যবাদ দিতে হয় মেঝ ভাইয়াকে (ডিসি ফুড)-কোন কোন মানুষ কি করে বুঝে যায় সব? তা না হলে সামাদ সাহেবেরই সংযোজন হবে কেন? তার মত উৎসাহী ফটোগ্রাফারের অভাবে আমাদের এত সাধের সাজগোজের বারটা বাজতো নাকি?
দাঁড়ান পরবর্তীতে এ নিয়ে আরো কথা হবে আপাতত পেটে তো কিছু পড়ুক? সামাদ সাহেব যোগার করে পাঠালেন পরোটা ভাজি ডিম। সদ্ব্যবহার যখন হচ্ছে তখনও দিনের অর্ধেক। তবে আর দেরি কেন? দেখে নেয়া যাক না আশেপাশের কয়েকটা জায়গা। আধা বেলায় হবিগঞ্জের বিশাল ঐশ্বর্যের আর কতটুকুই বা দেখা যাবে? তবুও।

বা’দিকে প্রথমে লেখক, মাঝখানে আল্পনা ভাবী, ডানে নূর কামরুন নাহার

সামাদ সাহেব শুরু করলেন ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান’ দিয়ে। ‘ইকোপার্ক’ এটি অর্থাৎ ন্যাচারাল বনাঞ্চলের সাথে একটু ব্যবস্থা-ট্যাবস্থা করে পর্যটকদের সুবিধা করে দেয়া আরকি। কাজটি করে বনবিভাগই তবে ‘নিসর্গ’ নামে একটি এনজিওও হাত মেলায় তাতে। ওরা স্থানীয় অধিবাসীদের হস্তশিল্প দিয়ে যেমন একটি সোভেনির সপ চালায় তেমনি স্টুডেন্ট ডরমেটরিতে একশ পঁচিশ টাকায় থাকার ব্যবস্থাও করে। শুনেছি দেখিনি অবশ্য।
সামাদ সাহেব স্থানীয় মানুষ গলিঘুঁপচি তাঁর সব জানা, তাঁর উপর নিশ্চিন্তে সব ছেড়ে দেয়া যায়। জানেন তো পর্যটন এলাকার মানুষের এস্থেটিক সেন্স খুব প্রবল, মানুষ আর প্রকৃতির সাথে থেকে থেকে তারা জেনে যায় পর্যটকদের কি ভাল লাগে আর কিভাবে ভাল লাগে, সামাদ সাহেব প্রটোকলের মানুষ, তিনি যে এটা জানেন তা তাঁর ছবি তোলার বহর, আর কৌতুহলের পরিমান দেখে বুঝা যায়। ভ্রমণে তিনি অক্লান্ত তার হাতে ভ্রমণ হয়ে উঠে আনন্দময়।

সংকীর্ণ পথের আশপাশ থেকে অজস্র প্রজাতির গাছ লতাপাতা আমাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। আলো অন্ধকার, আলো অন্ধকার। একটা বুনো গন্ধ। বারবার শ্বাস টানতে ইচ্ছা করে

সাত ছড়ি যাবার পথটা কি দারুন! এক ঘন্টার পথ, দু’পাশে সবুজ গালিচার থাকে থাকে উঠে যাওয়া চা বাগান, গাছের ছায়ার শান্তশ্রী। বিরাট ডানকান টি এস্টেট- আকুল হয়ে ডাকে ছবি তুলতে। এখানে নাকি এ রকম বেশ কয়েকটা চা বাগান আছে, নলুয়া, লালচাঁন, চাঁন্দপুর, সাতছড়ি, তেলিয়াপাড়া। শুনেছি বাংলাদেশের একশ বাষট্টিটি চা বাগানের মধ্যে তেইশটি হবিগঞ্জে, একানব্বইটি মৌলভী বাজারে, উনিশটি সিলেটে, বাকিগুলো অন্যান্য জায়গায়, সর্বশেষটি পঞ্চগড়ে।

পথে যেতে সবগুলোকে কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন না, সুন্দরী ডানকানকে দেখে তাদের সৌন্দর্যের কিছুটা আঁচ করা যাবে, আকবরের হেরেমের সুন্দরীদের না দেখেও যেমন তাদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই তেমনি আরকি।
পথের ঝোপঝাড়ে অজানা বুনোফুল উঁকি দিয়ে জানাবে অভিনন্দন, ক্ষনিক মাত্র, তারপর বাঁশ ঝাড়ের সুরঙ্গ, প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে চলতে হবে খানিক, তারপর আবার ডানকান, কত বড় টি এস্টেট রে বাবা। সামাদ সাহেব বলেন দ্বিতীয় বৃহত্তর বাংলাদেশে, আচ্ছা ক্ষুদ্র-বৃহৎ যাই হোক না কেন এমন সাজানো গোছানো, বৃটিশদের হাতে জন্ম কিনা।

এর মধ্যেও কেমন করে ঘুমায় মানুষ, তায় আবার কবি, সহ্য হয় বলুন। কামরুন নাহার আপাকে ডেকে বললাম আরে ঘুমান কেন, প্রকৃতি চলে যায় যে। তিনি সুন্দর চোখটি মেলে তাকান। আল্পনা ভাবীর হিহি কখন বন্ধ হয়ে গেছে, চোখে মুখে মুগ্ধতা, শুধুই মুগ্ধতা, পারলে সবটাই তিনি ধারন করে নিয়ে যান ঢাকায়, তারপর একটু একটু বের করে করে এনজয় করবেন আর হাসবেন, টুকটুক করে পাঠাবেন ছবি, বেশ কিছুদিন তার কাটবে সম্মোহনে। নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মানুষ এভাবেই পাশ কাটায় নকি? একেকজন একেক ভাবে?
নূর আপা ঠিকঠাক ‘প্রকৃতি’ দেখছে কিনা জানতে জিজ্ঞেস করলাম। আপার হেয়ালী উত্তর ‘প্রকৃতি কোথায়?’ হাসির ছররা ছোটে আবার। দাঁড়ান গল্পটা বলে নি, তা নাহলে সুবিধা হচ্ছে না।
আমার একজন স্টাফ কেবল কাজ করে কেবল কাজ করে। কোন দিন ছুটিছাটা নেয় না। একদিন বললাম আচ্ছা আরিফ সাহেব আপনি কখনও ছুটি নেন না কেন? আপনাকে তো কখনও ছুটি নিতে দেখলাম না? উনি অবাক হয়ে বললেন ‘কেন ছুটি নিব কেন?’
-এই আপনার ছেলে মেয়ে আছে, একটু বেড়াবেন টেরাবেন? আপনি টায়ার্ড হন না?
তিনি বিস্মত কাজের আবার ক্লান্তি কি? বুঝলাম বাস্তবতাকে এভাবেই পাশ কাটান তিনি। বললাম না তা হবে না আপনি আজই তিন দিনের ছুটির দরখাস্ত করবেন, ফেমিলি নিয়ে বান্দরবন ঘুরে আসবেন। ‘প্রকৃতি’ দেখে আসবেন একটু। তিনি যথারীতি ছুটি নিয়ে বউ বাচ্চাসহ বান্দরবন ঘুরে এলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম আরিফ সাহেব প্রকৃতি কেমন দেখলেন? তিনি হতাশ হয়ে উত্তর দিলেন প্রকৃতি তো কিছু দেখলাম না ম্যাডাম শুধু পাহাড় আর পাহাড়। গল্পটা আমাদের মধ্যে বেজায় চালু, সময় সময় লবনের ছিটা।

অরণ্যই ভাল, শহুরে জীবন তার পছন্দ নয়, মাঝখান থেকে ভাবীর হাতটা কিছু রক্তাক্ত হল। নাহার আপা বেতফল খুঁজে খুঁজে হয়রান, আর আমার তখন…’বেতের ফলের মত তার ম্নান চোখ মনে আসে।’

সাতছড়ি উদ্যানে ঢুকতে টিকিট কাটতে হয়। সাতটি ছড়ার নামে এই উদ্যানের নাম। নুর আপা বলেন এর আগের নাম ছিল ‘রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেষ্ট’- তা উনিই জানেন ভুল হলে দায় তাঁর। একটা ট্রেইল ধরে আমরা এগিয়ে চললাম। এরকম নাকি তিনটা ট্রেইল আছে তিন ঘন্টার একটা, এক ঘন্টার একটা, আরেকটা আধ ঘন্টার। নির্দিষ্ট গাইড নিয়ে ট্রেইলগুলো ঘুরে আসা যায়। ছোট ট্রেইলটির শেষে আছে টিপড়া পাড়া যেখানে চব্বিশটি উপজাতীয় পরিবার বাস করে। তাদের জীবনযাত্রও দেখে নেয়া যায়।
সংকীর্ণ পথের আশপাশ থেকে অজস্র প্রজাতির গাছ লতাপাতা আমাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। আলো অন্ধকার, আলো অন্ধকার। একটা বুনো গন্ধ। বারবার শ্বাস টানতে ইচ্ছা করে। চিরহরিৎ ও পতনশীল পত্রযুক্ত সংরক্ষিত বনটি ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধন আইনের আওতায় ২০০৫ সালে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে নাকি দু’শ প্রজাতির গাছপালা, একশ সাতান্ন প্রজাতির পশু এবং দু’শ প্রজাতির পাখি আছে। পাখিদের অভয়াশ্রমও। যদিও এখানে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ, আরো কিছু প্রাণী আছে, তবু দু’একটা বানর ছাড়া কারো সাথেই দেখা হল না। উনারা বোধ হয় মনুষ্য প্রানীটিকে একটু সমঝেই চলেন, এদের বুদ্ধিমত্তার সাথে একটু উত্যক্ত করার অভ্যাস আছে কিনা। কামরুন নাহার আপা দেখলাম আল্পনা ভাবীকে গাছপালা বেজায় চেনাচ্ছেন… বুঝলেন এটা শাল, এটা গর্জন, এটা ডুমুর, আমাদের গ্রমের বাড়ীর ডুমুর না বুঝচ্ছেন- বিদেশী ডুমুর, অভিজাত, এইটা আকাশমনি, আর এইটা-এইটা হল পাম। আল্পনা ভাবী ভাল ছাত্রীর মত সব শুনেটুনে মাথা নাড়েন কিন্তু উত্তর দিতে গিয়ে গড়বড় করে ফেলেন- শাল হয়ে যায় সেগুন, সেগুন হয়ে যায় শাল। কেমন টিচার দেখুন… ছাত্রীর ভাল্লুক দেখার সখ, হতেই পারে, বনে যখন ভাল্লুক আছেই, যদিও ভাল্লুক মামার পাত্তা নেই, টিচার অগ্যতা কি করেন অরণ্যের অন্ধকারে এক জায়গায় গাছের গুড়িতে শেওলা পড়ে ঘুপটি মেরে আছে যেন ভল্লুক মামা থাবা গেড়ে বসে আছেন, সেটাই দেখিয়ে দিলেন, ছাত্রীটি অম্লান বদনে বেদবাক্য মেনে নিলেন, আমি আর কি বলব ঘোলে যদি দুধের স্বাদ মিটে ক্ষতি কি?
বেত গাছের আধিক্য ছিল আর ছিল নানা রকম বাঁশ। আল্পনা ভাবী বেত গাছ কখনও দেখেননি, একটা ধরে টানাটানি করলেন যদি সাথে যায়, উহু বেচারা নড়ল না তার কাছে অরণ্যই ভাল, শহুরে জীবন তার পছন্দ নয়, মাঝখান থেকে ভাবীর হাতটা কিছু রক্তাক্ত হল। নাহার আপা বেতফল খুঁজে খুঁজে হয়রান, আর আমার তখন… ‘বেতের ফলের মত তার ম্নান চোখ মনে আসে।’
আমাদের সামনে এঁকেবেঁকে চলে আরণ্যক পথ ঝোপঝাড়ের ফাঁকে উঁকি দেয় সাদা বালুর নৃত্যছন্দ আরণ্যক ছড়া। ওখানে ছবি তুললে নাকি সমুদ্রের আবহ পাওয়া যায় তবে ডিঙ্গিয়ে যেতে হয় কিছুটা জঙ্গুলে পথ, তাই সহস হল না।
পথের শেষে শতখানেক সিঁড়ি ডিঙ্গোলেই ওয়াচ টাওয়ার-পুড়ো বনটা দেখে নেয়া যায় তাতে চড়ে, কিন্তু এই বয়সে আরো পঞ্চশটা সিঁড়ি বাওয়ার সাহসই বা কার তবুও যদি হতেম আমি আরব বেদুইন। সেই দুঃখ ভুলতে বণ্যফুল মাথায় গুজে ছবি তুলে নিলাম কতেক।

‘পশ্চিমে হেলিছে রবি, আরো দূর যেতে হবে কবি’… কিন্তু আমাদের হেলদোল কই- ক্লান্তিহীন মুগ্ধতা আর ছবি তোলা, নড়বার নামটি নেই? সামাদ সাহেবের তাগাদা আছে আরো কয়েকটা জায়গা যে পথে পড়ে আছে তাই নামতেই হল। নামার পথে আবার সেই চা বাগান- নামটি তার সাতছড়ি। যদিও নামবার উদ্দ্যেশ্য মহৎ ছবি তোলা কিন্তু আশ্চর্য হলাম চায়ের ফুল দেখে- চায়েরও যে ফুল হয় এই প্রথম জানলাম, ছোট পাপড়ী মেলা সাদা ফুল, ভেতরে উত্তল কমলা কেশর। সুন্দর। গন্ধটাও মৃদু কিন্তু মিষ্টি, অনেকটা লেবু ফুলের মত। চা বাগানের আলো আঁধারীতে ছবি তেমন ভাল আসেনা, কিন্তু কি ক্যারিশমায় কে জানে সামাদ সাহেব অদ্ভুত সব ছবি তুলে ফেললেন। স্মৃতি হয়েই রয়ে গেল ওসব।


২৬ ডিসেম্বর ২০২০.

আরো পড়তে পারেন

আগ্নেয়গিরি থেকে পায়ে হেঁটে বেস-ক্যাম্পে ফেরা

ইথিওপিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আছে ‘অ্যারতে-আলে’ নামে লাভা উৎক্ষেপণে প্রজ্বলিত একটি আগ্নেয়গিরি। আমরা বেশ কয়েকজন পর্যটক আজ জোট বেঁধে, একটি ট্যুর কোম্পানির গাইডের তত্ত্বাবধানে ওই আগ্নেয়গিরির পাশের একটি লাভা-হ্রদের পাড়ে ক্যাম্পিং করার উদ্যোগ নিয়েছি। ওখানে যেতে হলে প্রথমে একটি বেস-ক্যাম্পে এসে প্রস্তুতি নিয়ে ট্র্যাক করতে হয় ঘণ্টাকয়েক। বেস-ক্যাম্পে পৌঁছানোও ঝকমারি বিশেষ, আমরা ঘণ্টাকয়েক ল্যান্ডরাবারে প্রায়-দুর্গম এক….

মনে করি আসাম যাব

আফ্রিকার মাসাইমারা সাফারিতে যাওয়ার পর আর কোনো বড় সাফারিতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। অপর্না সেনের ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ সিনেমাতে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার চরিত্রে রাহুল বোসের মুখে কাজিরাঙার কথা শোনার পর এ রিজার্ভ ফরেস্টে সাফারি করার ইচ্ছা জেগেছিল। মনে হচ্ছিল বাড়ির খুব কাছের এ জায়গাটাতে যে কোনো সময়েই যাওয়া যায়, আমাদের উত্তর পূর্ব সীমান্ত পেরিয়ে আর….

শিল্পের দেশে সৌন্দর্যের দেশে

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ভেনিসে পা রেখেছিলাম এক রৌদ্রোজ্জ্বল গ্রীষ্মের দুপুরে। যাত্রীবোঝাই পাবলিক বাসে চেপে যাত্রা করলাম সেন্ট মার্কোসের উদ্দেশে। সেন্ট মার্কোসে অবস্থিত বিখ্যাত স্থাপত্য ক্যাথেড্রাল। ক্যাথেড্রালের চারদিকের দেয়াল সুসজ্জিত কারুকার্যে খচিত। চিত্রকর্ম ও অক্ষরে লিপিবদ্ধ বিভিন্ন কাহিনি মুগ্ধতা তৈরি করে। এখানেই ভেনিসের প্রাণভোমরা, সেই বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানেল যা যুক্ত করেছে শতাধিক জলরাশিকে। বিশাল খাল ভেনিসকে….

error: Content is protected !!