Author Picture

রাহমান ওয়াহিদের একগুচ্ছ কবিতা

রাহমান ওয়াহিদ

করোনা হলুসিনেশন
.
শুনশান নীরবতায় চাপ চাপ মাটি কাটার
শব্দ ভাসে। ঠুকঠাক কাঠ কাটার শব্দ ভাসে।
বুক সমুদ্দুরের ঢেউশব্দ কানে ভাসে।
কোথায়? কোথায়?
কে করে এমন শব্দ মিথ্যাচার?

নাহ্। কোথাও কোনো শব্দ নেই।
কোথাও কোন লাশ নেই। যে লাশের গন্ধ
বুলেটিন শব্দে ভাসে, তা অন্য কারো-
সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব থেকে সে বরাবরই আলাদা।

ধ্বনি আসছে-সারি সারি শয্যা হবে
সফেদ চাদরের সেইসব নাতিশীতোষ্ণ শয্যায়
আমরা এই ব্রাত্যজনেরা ঘুমোতে যাবো
কতদিন মিছেভয়ে ঘুম নেই চোখে।

চাঁদের পোশাকে ঢাকা অদ্ভুত মানুষগুলো
আমাদের পাল্স মাপবে। মিনিটে মিনিটে।
শ্বাসতন্ত্রে ছড়িয়ে দেবে দামি দামি বাতাস সব।
আহা! কি দারুণ ঘুমই না হবে আমাদের!


পাখি রে তোর…
.
পাখি রে তোর আকাশ নীড়ে নেই ঠিকানা
ঘুমোস্ কোথা? পেতেছিস কোন্ জল বিছানা?
জলকাদাতে ঢেকেছিস তোর শাদা পালক
মুখ দেখি না তো, দেখি যে শুধু অলীক নোলক।

ও পাখি তোর কংকনে বাজে কার মেয়ে নূপুর?
পুুড়ে পুড়ে সোনা হয় কেন তার নীলচে দুপুর?
পাখি রে তোর মন কোথা রে কোন্ পাঁজরে
দে ওম্ দে, বুক খুলে দে, দেখি ভালো করে।


মৌনতার রহস্য বুনন
.
অস্বচ্ছ কর্ণিয়ায় কী করে যেন পড়ে ফেলি
মৌনতার রহস্য বুনন
ফেলে দেয়া নগ্ন চিঠির অজীর্ণ অক্ষরেও
আশ্চর্য পেয়ে যাই
অনাক্ষরিক হৃদ শিল্পের মৌল অনুবাদ।
নি:শ্বাসে যে ঘন হয় হৈমন্তিক ঘ্রাণ আর
কার্ণিশে বেজে যায় পাখিদের উৎসবী পাখোয়াজ
গাঢ় অনুভবে স্থিত হয় তাহাদেরও ভাষা ও সঙ্গীত।

এমত স্বাচ্ছন্দ্যেও স্বপ্ন খেকো সর্পিল সময়
বেমালুম খেয়ে যায় বাড়ন্ত আয়ু সোমত্ত নারী ও ঘুম
বোধের সৌম্য আকর।
একান্ত গৃহী এই আমি নিমজ্জিত সাঁতারুর মতো
উদ্ভ্রান্ত হাতড়ে বেড়াই সেইসব বমনোন্মুুখ উৎস মুখ
পায়ে চাপা লোকজ পলিতল, কখনো বা নগরীর নম্র বায়ু।


দুধেল মাছিরা
.
ক্লান্তির আবছায়ায় বয়সটা ঝিমোয়।
সময়ের সংবিদে পা রেখে
হরিণ জোছনায় গা ধুতে নেমেছে যে
দুধেল মাছিরা
তাদের ডানায়ও সেয়ানা বাদুড়
শিকারী পাখা মেলেছে কৌশলী নখর ছড়িয়ে।

পোড়া রোদ্দুরও কি পেঁজা মেঘের পেটে
মুখ ডোবালো?
হিসেবের গেঁড়াকলে বোধের ঢেঁকিও যখন
নিরুত্তাপে জড়সড়, তখন হে বৃদ্ধ সময়
আমিষের বাড়ন্ত আয়ু নিয়ে
কোন্ অভাগীর জড়ায়ু চিরে ফোটাবে
ভ্রুণের সুডৌল হৃদয়?


চন্দ্রালোক
.
বলছি না যে এটুকুই শস্যভূমি, কিষাণির আলতা পা
যেখানে অরণ্য নাবিকেরা সব প্রচ্ছন্ন মৌন প্রশ্রয়ে
নোঙর ফেলেছিল বাউল বিবাগে।
বলছি না যে এটুকুই চন্দ্রালোক, এটুকুই তৃষ্ণা ও জলাধার
মুছে যাবে সমস্ত ছায়ানীল কষ্ট তিলক।
বলছি না যে এইসব কংক্রিটের ঘাস তুলে তুলে
শ্রমশিল্পির ঘামের দামে বেলাশেষের কড়ি গুণে নেব।

যে কথাটি শিল্পস্বর হতে হতেও খাবি খাচ্ছে শুয়োরের
পশমি করতলে-
বলতে কি পারি যে সে কথাটিও কবিতার কিন্নরি পংক্তি হবে?
হলে হোক গন্ধম থেকে হৃদপদ্ম, গেলে যাক সুশীল শয্যায়
যে কোন সুগন্ধি নারী।
তবুও কি বলা যাবে যে এ শহরের বর্জ্য আর বকুলেরে
একই ঠোঁটে তুলে নেবে অভিমানী কাকেরা সব?

আরো পড়তে পারেন

রিয়াসাত আল ওয়াসিফের একগুচ্ছ কবিতা

রেট্রোসপেক্টিভ বই সাজাতে সাজাতে জনৈক কবির মনে হলো— এত এত বই কবে পড়ব! এই ফোকাস হারানো সময়ে মানুষ যেন গুড়ো গুড়ো কাচ। হঠাৎ তাঁর মনে হলো বই বাদ দিয়ে আজ বরং পাপগুলোকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যাক। কতদিন দেখেনি দেখতে চায়নি, দেখা হয় না, দেখা যায় না। যাপিত জীবনের কাদায় শুধু মুখ ঢেকে যায়। মুখ….

সাযযাদ আনসারীর একগুচ্ছ কবিতা

ঋতু রমনী অন্তহীন পথের মত ছিলো ঋতু রমনী চেনা পাতা ও পাখি থেকে অচেনা ফুলের পথে চলে গেল সে। কথা ছিলো তার সাথে রাগ-রাগিনীর কথা ছিলো অসংখ্য পত্র-পল্লবীর, কথা ছিলো আমাদের নাম উড়াবার কথা ছিলো কত কথা দেবার নেবার। এই খানে আমাদের মন অন্ধ অধীর এই খানে না বাঁধা ঘাট জীবন নদীর, এই খানে পথে….

আজাদুর রহমানের তিনটি কবিতা

দূরত্ব একটা ধারণা আমাদের মধ্যে কোন দূরত্ব নেই। তুমি যেভাবেই থাকো, শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে সামনে-পিছনে-ডাইনে-বায়ে তোমার যেভাবে মন চায় এমনকি পরস্পর গভীর আলিঙ্গনেও। তুমি যেখানেই থাকো ঢাকা বগুড়া চট্রগ্রাম আমেরিকা কোস্টারিকা কিংবা পৃথিবীর যে কোণাতেই, আমাদের মধ্যে এতটুকু দূরত্ব নেই। দূরত্ব বলে আসলে কিছুই নেই এই যে ছায়াপথের পর সুদূরে জ্বলছে যে তারা সেখানে কেউ কারও দূরে….

error: Content is protected !!