Author Picture

এ ডেড সিক্রেট

কাউসার মাহমুদ

অনেক আগে টাম্বা প্রদেশে ইনামুরায়া জেনসুকে নামক এক ধনী ব্যবসায়ী বসবাস করতো। ও-সুনো নামে উচ্ছল, প্রানবন্ত, চালাক এক সুন্দরী মেয়ে ছিল তার। একদা ধনী জেনসুকে তার বাড়ন্ত মেয়ের শিক্ষাদীক্ষার ব্যাপারে ভাবলেন যে, দেশের শিক্ষকরা তাকে যেমন শিক্ষা দিতে পারে, কেবল সে শিক্ষার ভেতরই তাকে বড় হতে দেয়াটা দুঃখজনক; তাই তিনি তার মেয়েকে বিশ্বস্ত কিছু পরিচারকের তত্ত্বাবধানে কোয়াট’তে পাঠানোর মনস্থ করেন। এবং ভাবলেন, সেখানে সে শহুরে অভিজাত নারীদের তত্বাবধানে মার্জিত আচরণের দীক্ষা পাবে ও ভদ্রতাগুণে সুসমপ্ন হয়ে ওঠবে। যাহোক, এভাবে তার শিক্ষা সমাপন হলে ও-সুনো তার পিতার এক বন্ধুর ছেলের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। ও-সুনোর স্বামীও একজন ব্যবসায়ী। তার নাম নাগারায়া। বিয়ের পর ও-সুনো প্রায় চার বছর তার স্বামীর সঙ্গে সুখে-শান্তিতে বসবাস করে। তাদের ছোট্ট ফুটফুটে একটি ছেলেও হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দাম্পত্য জীবনের চতুর্থ বছরেই ও-সুনো অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এদিকে, ও-সুনোর শেষকৃত্যের সে রাতেই সুনোর ছোট্ট ছেলেটা ভয় পেয়ে নীচে ছুটে আসে এবং পরিবারের লোকদের বলে যে, তার মা ফিরে এসেছে। একটু আগেই সিঁড়ির উপরের ঘরে সে তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসেছে। কিন্তু কোন কথা বলেনি। হঠাৎ ছেলের এমন অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে কয়েকজন বিষয়টা দেখতে উপরে ও-সুনোর ঘরে যায়। এবং সত্যিই তারা ছোট একটি প্রদীপের আলো দেখে চমকে যায়, যেটি ঘরের ভেতর মঠের সামনে জ্বলজ্বল করছিল। মৃদু ওই আলোর ভেতর ও-সুনোও যেন অস্পৃশ্য আবছায়ার ভেতর

তার আলমারিটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরো আশ্চর্য যে, ছায়াটি দেখতে একদম ও-সুনোই। তার গায়ে তার নিজের প্রিয় অলঙ্কারগুলো জড়ানো এবং তখনও সে তার পরিধেয় পোশাকেই তাদের সামনে দাঁড়িয়ে। তার মাথা এবং বাহুদ্বয় স্পষ্ট দেখা গেলেও- কোমর থেকে নিম্নাংশটুকু একটি সূক্ষ্ম অদৃশ্যের ভেতর চিত্রিত। যেন এটা তার এক অসম্পূর্ণ প্রতিবিম্ব। যা জলের উপর এক ভ্রম জাগানিয়া ছায়ায় পরিবর্তীত হয়েছে।

এই দৃশ্যে লোকেরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রুমে ছেড়ে পালিয়ে আসে। কিছুটা ধাতস্থ হবার পর তারা  নিজেদের মাঝে আলোচনা শুরু করলে, ও সুনোর শ্বাশুড়ি বলে, ‘একজন নারী স্বাভাবিকভাবেই তার ছোট ছোট জিনিসগুলোর প্রতি আগ্রহী ও স্নেহান্ধ হয়।’ আর ও-সুনোও তার সমস্ত জিনিসপত্রের সাথে খুব বেশী সংযুক্ত ছিল। হয়তো সে এগুলো দেখার জন্যই ফিরে এসেছে। এ নতুন কিছুই না, বহু মৃতই এই কাণ্ড করে থাকে। যদি না জিনিসগুলো দ্রুত প্যারিস মন্দিরে দেয়া হয়। তাই আমরা যদি ওসুনোর গাউন, যাবতীয় পরিধেয় পোশাক ও কটিবন্ধগুলো মন্দিরে দিয়ে দিই—এতে হয়তো তার আত্মা শান্তি পাবে।’

বৃদ্ধার এ কথায় সবাই একমত হয়ে যত দ্রুত সম্ভব এটা নিষ্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং সেমতে পরদিন ভোরেই ও-সুনোর ব্যবহৃত সমস্ত ড্রয়ারগুলো খালি করে তা থেকে তার যাবতীয় বস্ত্রাদী ও জিনিসপত্র মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যের হলো, পরবর্তী রাতেই সে আবার ফিরে আসে এবং পূর্বের মতোই তার আলমারির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। এরপর পুনরায় এবং প্রতি রাতেই সে ফিরে আসে আর ঠিক একভাবেই তাকিয়ে থাকে। এতে ধীরেধীরে  বাড়িটি যেন আস্ত একটা ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়ে যায়।

অগত্যা শেষতক ও-সুনোর শ্বাশুড়ি প্যারিশ মন্দিরে গিয়ে প্রধান পুরোহিতকে ঘটিত সমস্ত বিষয় সবিস্তার বলে এর একটা বিহিত প্রার্থনা করেন। মন্দিরটি ছিল জেন মন্দির এবং এর প্রধান যাজক ছিলেন এক বৃদ্ধ পণ্ডিত। যিনি ‘ডায়গেন ওঁসো’ নামে পরিচিত। বৃদ্ধ সে পুরোহিত সব শুনে বলেন, ‘হয়তো, ওখানে ওই আলমারিটার ভেতর এমনকিছু আছে নিশ্চিতভাবে যার জন্যই ও এমন উদ্বিগ্ন।’

বৃদ্ধা তখন বিমর্ষ হয়ে পুরোহিতকে জানায়, ‘কিন্তু আমরা তো সবকটি ড্রয়ারই খালি করেছি। কিছুই নেই ওখানে।’

পুরোহিত ‘ওঁসো’ তখন বৃদ্ধাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আচ্ছা! আজ রাতে আমি তাহলে তোমার বাড়িতে যাব। ও-সুনোর ঘরটা ভালোভাবে দেখেই তবে সিদ্ধান্ত নেব কি করা যায়। আর হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি বাড়ির সবাইকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে রাখবে, আমি না ডাকা পর্যন্ত কেউ যেন ওই ঘরে প্রবেশ না করে।’

সূর্যাস্তের পর, পুরোহিত ডায়গেন ওঁসো শুনশান সে বাড়িটিতে আসেন। এবং তার জন্য নির্দিষ্ট ওই ঘরটি প্রস্তুত পান। নিস্তব্ধ শীতল সে ঘরে  ওঁসো একাকী মন্ত্র পাঠ শুরু করেন। কিন্তু ঘন্টা খানেক অতিবাহিত হওয়ার পরও কিছুই উপস্থিত হয় না। এদিকে পুরোহিত তার মন্ত্র পড়তেই থাকে। অবশেষে আরো দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই ও-সুনোর একটি  প্রতিবিম্ব আলমারির সামনে আবছায়াভাবে উপস্থিত হয়

সেদিন সূর্যাস্তের পর, পুরোহিত ডায়গেন ওঁসো শুনশান সে বাড়িটিতে আসেন। এবং তার জন্য নির্দিষ্ট ওই ঘরটি প্রস্তুত পান। নিস্তব্ধ শীতল সে ঘরে  ওঁসো একাকী মন্ত্র পাঠ শুরু করেন। কিন্তু ঘন্টা খানেক অতিবাহিত হওয়ার পরও কিছুই উপস্থিত হয় না। এদিকে পুরোহিত তার মন্ত্র পড়তেই থাকে। অবশেষে আরো দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই ও-সুনোর একটি  প্রতিবিম্ব আলমারির সামনে আবছায়াভাবে উপস্থিত হয়। তার চেহারায় তখন চিন্তার ছাপ। দৃষ্টিতে ঐকান্তিক বিমর্ষতা নিয়ে চোখ দুটো নিষ্পলক তার প্রিয় আলমারিটার দিকে তাকিয়ে আছে!

বৃদ্ধ পুরোহিত তখন যথাবিধি তার পবিত্র মন্ত্রগুলো পাঠ করেন। এবং ও-সুনোর কাইমিয়ো (মৃত্যুর পর বৌদ্ধ পুরোহিতদের দেয়া মরণোত্তর নাম কাইমিয়ো) দ্বারা তার প্রতিবিম্বকে সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি এখানে তোমার সাহায্যের জন্য এসেছি। সম্ভবত এই আলমারির ভেতর তোমার এমন কিছু আছে; যা তোমাকে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত করে তুলেছে। আমি কি তোমার জন্য ওটা খুঁজে দেখতে পারি? উপস্থিত ছায়াটি তখন ঈষৎ মাথা নাড়িয়ে তার সম্মতি জানায়। সম্মতি পেয়ে পুরোহিত ধীরে উঠে গিয়ে প্রথম ড্রয়ারটি খোলে। যেটা খালি ছিল। এরপর ধারাবাহিকভাবে সে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ ড্রয়ারটিও খোলে। এবং সবকটি ড্রয়ারই সে খুব সর্তকতার সাথে আদ্যোপান্ত খোঁজ করে দেখে। কিন্তু না! কিছুই পাওয়া যায় না। অথচ, অদ্ভুত! অদৃশ্য ছায়াটি একটু আগেও এখানে চিন্তিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল!

‘তবে কি চাইতে পারে সে?’ বুড়ো পুরোহিত নিমগ্ন হয়ে ভাবে। এমন ভাবনার ভেতর হঠাৎই তার সঙ্গে এমনকিছু ঘটে যে, সে অনুভব করে সম্ভবত এই কাগজের নীচে কিছু একটা আছে, যেটা দ্বারা ড্রয়ারগুলো সারিবদ্ধ ছিল। সে তখন আলতোভাবে প্রথম ড্রয়ারের আস্তরণটি সরায়। কিছুই নেই। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ড্রয়ারের আস্তরণ সরালেও কিছুই মেলে ন। শেষাবধি একেবারে নীচের ড্রয়ারের আস্তরণটি সরালে—সে একটি চিঠি খুঁজে পায়।

পুরোহিত তখন ও-সুনোর অদৃশ্য ছায়ার প্রতি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করে, ‘এটাই কি সে জিনিস যার জন্য তুমি এমন অস্থির হয়েছিল?’

পুরোহিতের প্রশ্নে ও-সুনোর ছায়াটি তার দিকে ফেরে তার ভীত দৃষ্টি চিঠির উপর নিবদ্ধ করে।

যাজক পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার শান্তির জন্যই কি  আমি এটা পুড়িয়ে ফেলতে পারি?

এতে ও-সুনোর অস্পৃশ্য ছায়াটি তার সামনে মাথা নত করে সম্মতি জানালে, যাজক তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, আগামী ভোরেই এটা মন্দিরের ভেতর পুড়িয়ে ফেলা হবে। এবং আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এটা পড়বে ন। তখন যাজকের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছায়াটি মৃদু হেসে প্রস্থান করে।

অবশেষে দীর্ঘ রাতের পর বৃদ্ধ যাজক যখন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে তখন ভোর। তিনি দেখেন, পরিবারের সদস্যরা নীচে দুশ্চিন্তার ভেতর জড়ো হয়ে আছে। তিনি তাদের নিশ্চিন্ত করে বলেন, ‘দুশ্চিন্তা করো না। সে আর কখনোই আসবে না।’ এবং সত্যিই ও-সুনো আর কোনদিন এ বাড়িতে আসেনি।

এরপর সেদিন প্রথম ভোরেই চিঠিটি পুরিয়ে ফেলা হয়। কোয়েটে পড়াকালীন সময়ে ও-সুনোর কাছে যেটা এক প্রেমপত্র ছিল। তবে এই প্রেমপত্রের ভেতর কি লেখা ছিল তা কেবল পুরোহিত একাই জানতেন! যা তিনি কোনদিন কাউকে বলেননি। এবং তার মৃত্যুর সাথে এই গুপ্ত রহস্যটিও তার সঙ্গে মারা গিয়েছিল!

 

{উনিশ শতকের অন্যতম জনপ্রিয় লেখকদের একজন প্যাট্রিক লাফকাডিও হেরান (১৮৫০-১৯০৪)। মার্ক টোয়েন, এডগার অ্যালান পো, রবার্ট লুই স্টিভেনসনসহ এই কাতারের নক্ষত্রদের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয় তাঁর নাম। গ্রীসে জন্মগ্রহণ ও আয়ারল্যান্ডে বেড়ে ওঠা হেরান ছিলেন সত্যিকারের উজ্জীবিত এবং বিশ্বভ্রমণকারী একজন মানুষ। মাত্র চুয়ান্ন বছর জীবনের বিস্তৃত কর্মকাণ্ড বিচিত্রভাবে তার জীবনকে উপস্থাপন করে। যেখানে একাধারে তিনি একজন শিক্ষক, অনুবাদক এবং এমন প্রভাবশালী লেখক— যিনি পশ্চিমে জাপানি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রবর্তন করেছিলেন।

হেরানের পুরো জীবনটাই এক রহস্যে মোড়ানো। যেন কোথাও একেবারে পাততাড়ি গুটিয়ে বসে যাওয়া নয়। হোক তা বিবিধ কারণ বা উপলক্ষে; তিনি ঠিক ছুটে বেরিয়েছেন শহর থেকে শহরে। যেন এক প্রকৃত শিল্পীর জীবনই কখনো ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায় তাকে ডেকে নিয়ে গেছে অনাবৃত কোন জীবনের ধারে। যেমন আমরা দেখি, একেবারে শুরুতেই ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সে সংক্ষিপ্ত শিক্ষাসমাপন শেষে ১৯১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পারি জমান তিনি। সেখানে ওহিও, সিনসিনাটিতে বসবাস শুরু করে নানাধরণের চাকুরী করেন হেরান। মূলত সিনসিনাটিতে থাকাকালীন সময়েই তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিকে কাজ শুরু করে ধীরেধীরে ‘সিনসিনাটি এনকয়ার’ এবং পরে ‘দ্য সিনসিনাটি কমার্শিয়ালের’ প্রতিবেদক হয়েছিলেন। এবং তৎকালীন আবহ, পরিবেশ-পরিপার্শ্ব সম্পর্কে অস্বাভাবিক সব গদ্য কবিতা ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রবন্ধ লিখে লিখেছেন। এছাড়াও সেখানে থাকাকালীন (ক্লিওপেট্রা’স নাইট- ১৮৮২) শিরোনামে ফরাসী লেখক থিওফিল গৌটিয়ার গল্পগুলোর অনুবাদ এবং আরেক ফরাসী কিংবদন্তি গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের কালোত্তীর্ণ উপন্যাস ‘দ্য টেম্পটেশন অব সেইন্ট এ্যন্থোনীর’ অনুবাদ করেন।

এরপর, ১৮৭৭ সালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লেখার কাজে নিউ অরলিন্সে গেলে এবার সেখানেই থেকে যান হেরান। এসময় মৌলিক প্রবন্ধের পাশাপাশি, ফরাসী লেখকদের অনুবাদ ও মূল গল্পসহ বিদেশি সাহিত্যের অভিযোজনে অসামান্য অবদান রাখেন। এবং এর কিছু পরে খুব দ্রুতই তিনি তার বিখ্যাত দুটি গ্রন্থ ‘স্ট্রে লিভস ফ্রম স্ট্রেঞ্জ লিটারেচার-১৮৮৪’ এবং ‘সাম চাইনিজ ঘোস্টস-১৮৮৭’ সমাপ্ত করেন। বস্তুত, তার নিবন্ধগুলোর পরিধিও বহু বিস্তৃত। বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মের উপর লেখার পাশাপাশি ফরাসি ও রুশ সাহিত্যের উপরও আছে তার অসামান্য কিছু প্রবন্ধ। এছাড়াও তার সম্পাদকীয়সমূহে বৈজ্ঞানিক বিষয় থেকে শুরু করে ফ্রান্স ও রাশিয়ায় ইহুদিবাদবিরোধী গুরুত্বপূর্ণ লেখারও উল্লেখ পাওয়া যায়। এমন বিচিত্র বিষয়ের পাশাপাশি ১৮৮৯-এ রচিত তার বিখ্যাত এডভেঞ্চার উপন্যাস ‘চিতা’ ওই সময় থেকে আজ অবধি এক অমূল্য গ্রন্থ হিসেবে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। তবে হেরানের জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে ধরা হয় ১৮৯৬-১৯০৩ এর সময়কালকে। যখন তিনি টোকিওর ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন। এই স্বল্পসময়েই তিনি যেন বহুপ্রজের মতো তার বিখ্যাত চারটি বই (এক্সটিক্স এণ্ড রেট্রোস্পেকটিভ -১৮৯৮), (ইন ঘোস্টলি জাপান-১৮৯৯), (শ্যাডোয়িংস-১৯০০) এবং ‘অ্যা জাপানীজ মিসিলেইনি-১৯০১) লিখে ফেলেন। প্রকৃতপক্ষে জাপানের রীতিনীতি, আচার, ধর্ম এবং সাহিত্য সম্পর্কে তিনি ছিলেন এক তথ্যবহুল ধ্রুপদী। এছাড়াও ১৯০৪-এ প্রকাশিত তার ‘কুয়েডেন: স্টোরিজ এণ্ড স্টাডিজ অব স্ট্রেঞ্জ থিংস’ গ্রন্থটি একটি অতিপ্রাকৃত গল্পসংগ্রহ ও হাইকু কবিতার অনুবাদ সমগ্র। ‘এ ডেড সিক্রেট’ মূলত একটি জাপানি ভৌতিক গল্প। যা হেরানের গল্প সমগ্র কুয়েডেনে প্রথম প্রকাশিত হয়।}

আরো পড়তে পারেন

প্রতিদান

‘আমাকে আপনার মনে নেই। থাকার কথাও নয়। সে জন্য দোষও দেব না। এত ব্যস্ত মানুষ আপনি, আমার মত কত জনের সঙ্গেই হঠাৎ চেনা-জানা। কেনইবা মনে রাখবেন তাদের সবাইকে?’ বেশ শান্ত গলায় বললেন মিসেস অঙ্কিতা। টেবিল থেকে কি যেন একটা নিলেন তিনি। পিটপিট করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সাফরাব। একটা ইনজেকশন, একটা ছোট টেস্টটিউবের মতো ভায়াল,….

লিলিথ

শাওয়ার বন্ধ করে দিতেই পানির হালকা ঝিরঝিরে শব্দটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রযুক্তির কল্যাণে ঝরনার শব্দ আজকাল বাসাতেই শোনা যাচ্ছে। আর এ শব্দটা অদ্ভুত সুন্দর। কেমন যেন মোলায়েম। সাদা তুলতুলে মেঘের মতো। অনেক দূর থেকে ভেসে ভেসে এসে জড়িয়ে ধরে। চোখের পাতাগুলোয় ঠান্ডা আমেজ ছড়িয়ে ঘাড় বেয়ে নামতে থাকে। আরামে চোখ বুজে আসে আমার। রিলাক্স হতে….

বন্ধনবিলাস

এ শতকের ধূলিধূসরিত ঢাকায় দাঁড়িয়ে কল্পনা করাও কঠিন। গত শতকের ঢাকা ছিল রাজহাঁসের পালকের মতো পরিচ্ছন্ন ধবধবে। একতলা-দোতলার ছাদে শীতলপাটি বিছিয়ে রাতের আকাশের দিকে চাইলে দেখা যেত নক্ষত্রদের কনফারেন্স। মেঘহীন রাতগুলোতে খুব কাছের হয়ে যেত দূরছায়া নীহারিকার পথ। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে। অগণ্য তারার যে কোনো তারাকে। রাস্তার দু’ধারে জামরুল-জিউল আর বাবলার অন্ধকার ঢাকতে….

error: Content is protected !!