শীতের দিনগুলো ছোট। পত্রিকা পড়া শেষ হতে না হতেই দুপুর গড়িয়ে যায়। এখন শরীরচর্চার পালা। ডাক্তারের সহায়তায় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্কিপিং রোপ পাওয়া গেছে। উপকরণ ওইটুকুই। প্রায় সবাই আজকাল শরীরচর্চা করে। বুক-ডন, বৈঠক, কয়েকটি পর্যায়ে।
কারাকক্ষের একটি অন্যতম শারীরিক শত্রু হচ্ছে- হজমের গোলমাল। হজম না হওয়া থেকে গড়া নানা অনিয়ম। প্রায় সবারই আজকাল অর্শ রোগ দেখা দিয়েছে। ডাক্তার এক পো তরকারি বাড়িয়ে দিয়েছে, বলেছে, র্যাডিকাল ট্রিটমেন্ট এখানে হবে না। পায়খানার সময়ে রক্ত পড়ে। অর্শরোগীদের শারীরিক শত্রুর বিরুদ্ধেও লড়াই চলছে- শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে। বিকেল হয়ে আসে। মহল সিনেমা থেকে ‘জাগো অনশন বন্দি’ রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। এ সময়ে ইন্টারভিউ আসে কারও কারও। কখনও কখনও আত্মীয়-স্বজন দেখা করতে আসে।
তারপর হেলতে দুলতে চাচা আসবেন। গুপ্ত তাকে চাচা বলে ডাকেন। চাচাও গুপ্তকে ডাকেন চাচা। চাচার একটি বিড়ি দরকার।
কালেক্টিভ থেকে যে বিড়ি তাকে দেয়া হয় তাতে চাচার চলে না। আধ্যাত্মিক কোনো প্রশ্ন তুলে চাচা আলাপ জমান। যার শেষ পরিণতি একটি বিড়িতে।
এমনি দুপুরে হঠাৎ কোনদিন হয়তো চিরকুট আসে অফিস থেকে। অমুক খালাস। হৈ হৈ করে ওঠে সবাই। সামান্য একটু দুঃখ হয়- হয়তো কারও কারও মনে। সীমাবদ্ধ পৃথিবীর লোকসংখ্যা কমে যাওয়া মোটেই ভালো কথা নয়। আনন্দও হয় খুব- তবু তো একজন বেরিয়ে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে দাঁড়ায় সবাই।
অমুককে আমার কথা বলো।
আমার নামে বই পাঠিও…
কিছু টাকা পাঠিও; পারলে কিছু কাগজপত্র জমা দিও তো হে।
অসংখ্য ফাই-ফরমাসের পর বন্ধুটি হাত গুটিয়ে বজ্রমুষ্টি তুলে অভিবাদন জানিয়ে বিদায় নেয়। তারপর কেউ কেউ সেই সব ফাই-ফরমাস পূরণ করে। কেউ কেউ করে না, বা করতে পারে না। ঠাট্টা করে বন্দিরা বলে- জেলের সামনের বটগাছে ভূত থাকে একটা। ওই সবকিছু ভুলিয়ে দেয়।
মুক্তির প্রসঙ্গে আবার বন্দিত্বের প্রসঙ্গও আসে। নিরাপত্তা বন্দি যদি কেউ আসে, তবে তাকেও ঘিরে ধরে সবাই। জানতে চায় বাইরের দুনিয়ার খবরাখবর। তার রিপোর্ট শোনার জন্য সভা বসে। সেদিন এল নতুন একটি লোক। ক্যালেন্ডারওয়ালা ছবি বেচত সে।
পার্কে শ্রীকৃষ্ণের ক্যালেন্ডারের নিচে কায়েদে আজমের ছবির ক্যালেন্ডার ঝুলিয়েছিল বলে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এক মাস পরে ‘আটকনামা’ এল তার কাছে। সঙ্গে তাকে কেন আটক করা হল তার কারণাবলী লেখা আছে। ‘তুমি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছিলে- তার আলটিমেট এইম ছিল বর্তমান সরকারকে বলপূর্বক উচ্ছেদ করা।’
অর্ডার পেয়ে উচ্চৈস্বরে কাঁদছিল তসবিরওয়ালা (হায় হায় সে নাকি…রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিপন্ন করছিল।)
এমনি দুপুরে হঠাৎ কোনদিন হয়তো চিরকুট আসে অফিস থেকে। অমুক খালাস। হৈ হৈ করে ওঠে সবাই। সামান্য একটু দুঃখ হয়- হয়তো কারও কারও মনে। সীমাবদ্ধ পৃথিবীর লোকসংখ্যা কমে যাওয়া মোটেই ভালো কথা নয়। আনন্দও হয় খুব- তবু তো একজন বেরিয়ে যাচ্ছে। তাকে ঘিরে দাঁড়ায় সবাই।
তারপর লক আপ হওয়ার পালা। জমাদার আসে। সবাই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। জমাদার মাথা গুনতি করে যায়। যাওয়ার সময় চাবি দেয়া দরজার ভারি তালাটা বারে বারে টেনে দেখে। মিনিট পাঁচেক পরে আবার ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ে। সব ওয়ার্ডেই ‘লক আপ’ হয়ে গেছে।
এখন বাতিটা নিয়ে চৌকির ওপর বসে যায় সবাই। ইংরেজি পত্রিকাটি সবাই নিজেরা পড়তে পারে না। তার জন্য সমষ্টিগতভাবে পড়ার ব্যবস্থা। সরাসরি অনুবাদ করে পড়েন চক্রবর্তী। কোনো কোনো দিন ছাত্রটিও পড়ে। আর সবাই শোনেন।
আগা থেকে গোড়া পড়া হবে গভীর মনোযোগ দিয়ে। অর্থনীতির খুঁটি-নাটি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাদের নজর এড়ায় না। ব্রিটেনের ডলার সংকট, ইঙ্গ-মার্কিন অর্থনীতির ঝগড়া-ফ্যাসাদ, চীন বিপ্লবের অর্থনৈতিক তাৎপর্য এসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নাড়া দেয় সবার মনে। এমন করে পত্রিকা পড়া বাইরে অনেকেরই হয় না। নানা দিকের টানাপোড়েন থাকে। ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকাটি কাদের মুখপত্র তা সবার জানা আছে। এ পত্রিকাটি সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করতে ছাড়ে না। কিন্তু দশটা খবর একসঙ্গে মিলিয়ে পড়লে অনেক নিগূঢ় তথ্য ও তত্ত্বের সন্ধান মেলে। তার জন্য আছে ‘রিভিউ’। সপ্তাহ শেষে এক দুপুরে রিভিউ হবে পত্রিকার সংবাদের ওপর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ঘন্ট-দিকনির্ণয়ের ওপর রাজবন্দিরা বলবেন নিজের নিজের মতামত। পরিবর্তনশীল দুনিয়াকে উপলব্ধি করার জন্য রিভিউ একটি উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার।
যাক, যা বলছিলাম। সন্ধ্যার পর পত্রিকা পড়তে শুরু করেন চক্রবর্তী। সান্ত্রীটাও জানতে চায় দুনিয়ার চাকা কেমন চলছে। সংক্ষেপে জানাতে হয় তাকে কেমন চলছে, তারপর আবার পত্রিকা পড়া চলতে থাকে। সাড়ে ন’টার পর পত্রিকা পড়া শেষ হয়। এবার খাবার পালা। এখন পরিবেশন করবেন গুপ্ত। এ বেলায় মাছ-মাংস সম্ভব হয় না। কারণ ডায়েটের অপ্রাচুর্য।
খেয়ে উঠে হয়তো দেখা যাবে ছয়টি গুপ্তের গদি নৌকার মতো স্যান্ডেল জোড়া পায়ে দিয়ে থালা ধুতে চলে গেছে। ওর নিজের স্যান্ডেল জোড়া কোথায় পড়ে আছে কে জানে। ‘টুলু’-ধমক দিয়ে ডাক দেন গুপ্ত। টুলু ফিরে আসে। ‘এখনও তুমি কমিউনিস্ট হতে পারনি পুরোপুরি’ গুপ্ত বলেন। ‘এখনও তুমি শুধু একজন ছাত্রই।’
‘বাইরে থাকতে তো এরকম ছিলাম না।’ ছাত্রটি জবাব দেয়। ওর মতে এ হচ্ছে জেলে বন্ধ থাকার ফল।
‘না’ গুপ্ত বলেন, ‘বাইরেও এরকমই ছিলে। কেবল ধরা পড়তে না। এখন ক্ষুদ্র গণ্ডি আর সীমাবদ্ধ ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে।’
অত্যন্ত ছোট্ট ঘটনা। কিন্তু এগুলোও উপেক্ষণীয় নয়। এর মধ্যে নিহিত আছে আরও বড় তাৎপর্য। খাওয়ার পর তাস খেলা। একটা কি দুটো ‘রাবার’ পর্যন্ত ব্রিজের আসর। তারপর আস্তে আস্তে শুয়ে পড়া। খাটে শুয়ে শুয়ে আবার আলাপ চলে। কোরিয়ার যুদ্ধ… ভাসানীর বক্তৃতা… সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির ভূমিকা।
তারপর আবার সকাল হবে। আবার বন্দিরা জেগে উঠবে। আবার একটি দিন কাটবে। সেই নিয়ম বাঁধা বৈচিত্র্যহীন চলা।
এখানকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জিনিস-সামগ্রিক চেতনাবোধ। কর্তৃপক্ষ বন্দিদের দেখে একেকজনকে আলাদা করে। তা সত্ত্বেও বন্দিদের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটা বিরাট সমষ্টিগত জীবন। কারণ তারা রাজনীতি দিয়ে সহজেই বুঝতে পারে। এ জীবনের তাৎপর্য টাকা-পয়সা থেকে খাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত সবই যৌথ ব্যবস্থার অন্তগর্ত। সবার টাকা নিয়ে হয়েছে সাধারণ তহবিল। সবার তেল-সাবান নিয়ে হয়েছে ‘কালেক্টিভ’। সাধারণ তহবিল থেকে প্রত্যেককে বিড়ি দেয়া হবে- যারা অভ্যস্ত তাদের। আগে ছিল জনপ্রতি ছ’টা বিড়ি। সম্প্রতি হয়েছে তিনটি। কারণ কারও হয় না ওতে। কিন্তু দুজনে মিলে গ্রুপ করে চলার ফলে বেশ চলে যায় ছ’টা বিড়িতে।
কারও টাকা সমান নয়। কারও হয়তো কিছু নেই। আপিসে জমা থাকে টাকাগুলো। কিছু কিনতে হলে চিরকুট পাঠানোর নিয়ম আছে। কারও স্বাস্থ্য খারাপ। একটা টনিক ফুড-এর দরকার… তহবিল থেকে দেয়া হবে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে খরচ চলবে না টাকা-পয়সা। প্রত্যেক ব্যাপারে এই যৌথ চেতনা অনেকখানি বিদ্যমান। এই যৌথ মণ্ডলীর মধ্যে কেবল রাজবন্দিরাই নেই। আছে হাজতিরাও। ওয়ার্ডের মধ্যে ৮/১০ জন কয়েদি হাজতিও আছে। কেউ হয়তো জমি নিয়ে দাঙ্গা করে জেলে এসেছে। কেউ এসেছে চুরি করে। কিন্তু রাজবন্দিদের উন্নততর চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসে তাদের মধ্যেও হচ্ছে যৌথ চেতনার সংক্রমণ।
এখানকার জীবনটা চলে রুটিন মাফিক। অন্য কথায় বলা চলে ভীষণ গদ্যময়। কিন্তু এরই মাঝে রসের সঞ্চার করার প্রচেষ্টার অন্ত নেই।
গানে, কবিতায়, আবৃত্তিতে, ব্যঙ্গে আর ক্যারিকেচারে ভরপুর হয়ে ওঠে এখানকার অনুষ্ঠানগুলো। সাহিত্যের বৈঠকে চলে গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ পাঠ। বিষয়বস্তুগুলো সব সামাজিক-রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাছাই করা। যেমন ছাত্রটি সেদিন একটি ক্যারিকেচার দেখাল স্থানীয় একজন নেতার (সম্প্রতি চুরির অপরাধে যার শাস্তি হয়েছে) বক্তৃতা অনুকরণ করে। কদর্য রাজনীতির ততোধিক কদর্য অভিব্যক্তি। অন্য একজন দেখাল ভোটের সময় সাধারণ একজন কৃষক সোনা মিয়া কেমন করে ভোটের সময়ে…পক্ষে প্রচার চালিয়েছিল। তার ইতর ভাষায় বিপক্ষ দলের সমালোচনা সবার কাছে চমৎকার লাগে।
কিন্তু বন্দিত্বের অভিশাপ তখুনি টের পাওয়া যাবে না। যাবে বহু পরে। দিনের পর দিন সম্পূর্ণ বিনা-বিচারে যখন কাটাতে হবে, তখন। বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসবে না; বই নেই, পত্র নেই যে একটু পড়া যাবে, এমন একটা অবস্থা। শক্ত রোগ চিকিৎসা নেই। দিনের পর দিন ওজন যখন কমবে, মুখটা তখন বিবর্ণ হয়ে উঠবে, তখুনি কেবল উপলব্ধি করা সম্ভব বন্দিত্বকে।
তারপর গান। গান চলে কৃষক আন্দোলনের, শ্রমিক আন্দোলনের, নৌ-বিদ্রোহের গান। ঘুমতাড়ানি গান। পূর্ববঙ্গের কৃষকদের গান :
ভুড়ি ভাঙাটার বেটাডা
মোটর গাড়ির নেতাডা
মন ভুলাইল ভোটের বচন
দিয়ারে-
ভোটের বচন দিয়া।
এবেল মরি আর বাঁচি না
শুনি তোর ভোটের বচন…
ধারার সঙ্গে সঙ্গে সবাই ধুয়া তোলে। মাউন্টব্যাটের রোয়েদাদ বিরোধী- ‘তাক ডুমা ডুম ডুম’ সবার মনে সাড়া তোলে।
চক্রবর্তী ওঠেন, দেখান দুটো বক্তৃতা। সম্পূর্ণ দুই ধরন। প্রকৃত জননেতার বক্তৃতা আর সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের বক্তৃতা। চকৎকার প্রকাশ। ঠিক দুই বিপরীত রাজনীতির খাঁটি এবং নিখুঁত অভিব্যক্তি। এ ধরনের বৈঠক করার ভার হচ্ছে সাংস্কৃতিক কমিটির। বাইরের লোক, বিশেষ করে কয়েদি-হাজতিদের সঙ্গে কাটানোর পর যদি এ ওয়ার্ডে আসেন তবে অবাক হবেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কত সুখেই তো আছেন।
কিন্তু বন্দিত্বের অভিশাপ তখুনি টের পাওয়া যাবে না। যাবে বহু পরে। দিনের পর দিন সম্পূর্ণ বিনা-বিচারে যখন কাটাতে হবে, তখন। বাইরে থেকে কেউ দেখা করতে আসবে না; বই নেই, পত্র নেই যে একটু পড়া যাবে, এমন একটা অবস্থা। শক্ত রোগ চিকিৎসা নেই। দিনের পর দিন ওজন যখন কমবে, মুখটা তখন বিবর্ণ হয়ে উঠবে, তখুনি কেবল উপলব্ধি করা সম্ভব বন্দিত্বকে।
তার ওপর আছে রাজনৈতিক জীবনের অগ্নিপরীক্ষা। ছয় মাস পর পর সরকার গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার পাঠান। তারা বলে- ‘আত্মসমর্পণ করুন, ক্ষমা প্রার্থনা করুন…’ ক্রোধে উদ্দীপ্ত হয় বন্দিরা। অফিসার ফিরে যায়।
কর্তৃপক্ষের অন্যায় আচরণ, দুর্ব্যবহার যখন আসে, তখন আবার উদ্দীপ্ত হয় মানুষের মন। বিহিত করার জন্য মন আনচান করে ওঠে। তখন শুরু হয় লড়াই। বিনা বিচারে আটক বন্দিদের সেদিনও কোনো রাজনৈতিক সত্তা স্বীকার করা হতো না। ফাইলের ডায়েট, অপরাধীর কাপড়। উঠতে বসতে ফাইল আর গালের সম্মুখীন হতে হতো। দুর্ব্যবহার আর অপমান, আত্মসম্মানসম্পন্ন কোনো মানুষের সহ্য হতো না।
এর বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে সমস্ত প্রদেশের জেলগুলোতে; তীব্র লড়াই। জেলের মধ্যে অন্যায়ের, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উপায় আছে মাত্র একটা। সে হচ্ছে অনশন।
চার চারবার অনশন করেছে কেন্দ্রীয় কারার বন্দিরা। প্রথম বার পাঁচ দিন, দ্বিতীয় বার পঁচিশ দিন, তৃতীয় বার চল্লিশ দিন, চতুর্থ বারে আটান্ন দিন না খেয়ে ছিল বন্দিরা। জোর করে খাওয়ানোর সময়ে নাকের ভেতর দিয়ে নল ঢোকানোর চেষ্টার ফলে ফুসফুসে নল ঢুকে যায়। তার ফলে প্রাণ দিয়েছে দেশপ্রেমিক ছাত্রকর্মী শিবেন রায়। তার ফলে তৈরি হয়েছে সিকিউরিটি রুলস।
ছাত্রদের পড়াশোনার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে বটে। তবে কৌশলে সে অধিকার না দেয়ার ব্যবস্থাও আছে। খাদ্য অপর্যাপ্ত, পরনের কাপড় কম। উপার্জনক্ষমদের পারিবারিক ভাতা নেই। সামান্যতম ছোট গল্পের বইটি পর্যন্ত দেয়া হবে না।
তবু বন্দিদের অনমনীয় লড়াইয়ের ফলে কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু দাবি স্বীকার করেছে। দিন এগিয়ে যায়, পৃথিবীর দিকে দিকে রূপান্তর ঘটছে। খবরের প্রধান উৎস কাগজগুলোতে যদি কিছু নাও থাকে, তবুও থাকে বিজ্ঞাপনগুলো। ‘রেডিমেড’ শার্টের বিজ্ঞাপনগুলো দেখে বোঝা যাবে মানুষের রুচির পরিবর্তন। মানুষের মন দিন দিন বৈজ্ঞানিক হচ্ছে। ভড়ংয়ের মোহ থেকে মানুষ মুক্ত হচ্ছে দিন দিন। এই পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসে প্রিয়জনের চিঠিগুলো। ছাত্রটিকে ওর এক দূরসম্পর্কীয় বড় আপা জানিয়েছেন অকৃত্রিম শুভেচ্ছা। লিখেছেন, ‘তোমাদের মতো ছেলেদের বেঁচে থাকার দাম আছে।’ অথচ এই বড় আপাই ছিল একদিন ওর রাজনৈতিক জীবনের নির্মম সমালোচক। ঘটনার স্রোত এনেছে পরিবর্তন।
চলবে…